Logo
Logo
×

সারাদেশ

হত্যার ঘটনায় নাটকীয় মোড়

ছেলে নয়, সালমাকে খুন করে লাশ ফ্রিজে রাখে নারী ভাড়াটিয়া

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পিএম

ছেলে নয়, সালমাকে খুন করে লাশ ফ্রিজে রাখে নারী ভাড়াটিয়া

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার জয়পুরপাড়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনা নাটকীয় মোড় নিয়েছে। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ছেলে সাদ বিন আজিজুর চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। বাড়ির নারী ভাড়াটিয়াকে অনৈতিক কাজে নিষেধ করায় সালমাকে হত্যা ও ফ্রিজে লাশ গুম করা হয়।

থানা ও ডিবি পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত ওই নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। বিকালে এ খবর পাঠানো পর্যন্ত তাদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছিল।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং এ তথ্য দিয়েছেন।

গ্রেফতার তিনজন হলেন- বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের ইসলামপুর উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া সুলতানা হাসি (৪১), উপজেলার গুণাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৮) ও তালুচ বাজার এলাকার নারায়ণ রবিদাসের ছেলে সুমন রবিদাস (৩০)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুপচাঁচিয়া থানার এসআই সুব্রত সিং ও অন্য কর্মকর্তারা জানান, দুপচাঁচিয়া দারুস সুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আজিজুর রহমান চার ছেলে মেয়ের মধ্যে স্ত্রী উম্মে সালমা খাতুন (৫০) ও ছোট ছেলে একই মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ বিন আজিজুরকে (১৯) নিয়ে জয়পুরপাড়া এলাকায় চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। তাদের বড় ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় থাকেন।

গত ১০ নভেম্বর সকালে নাস্তা শেষে আজিজুর রহমান ও ছেলে সাদ বিন আজিজুর মাদ্রাসায় যান। দুপুরে ছেলে সাদ বিন আজিজুর বাড়িতে এসে দরজায় বাহির থেকে তালা দেখতে পান। তিনি বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাড়িতে মা উম্মে সালমাকে খুঁজে পাননি। ঘরের জিনিসপত্র তছনছ ও আলমিরাতে কুড়ালের আঘাত দেখতে পান। ফোন করে মাকে না পেয়ে সাদ এক পর্যায়ে ডিপ ফ্রিজ খুললে ভেতরে হাত-পা বাঁধা মায়ের লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে মাওলানা আজিজুর রহমান ও দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এদিকে র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির সদস্যরা মা হত্যায় জড়িত সন্দেহে ১১ নভেম্বর মধ্য রাতে সাদকে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচপীর আড়োবাড়ি এলাকায় দাদা রমজান মোল্লার বাড়ি থেকে আটক করেন। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সে তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে।

সে জানায়, টাকার জন্য মাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বাড়ির ডিপ ফ্রিজে রাখে। পরে সে ঘটনাটি ডাকাতের তা প্রমাণ করতে কুড়াল দিয়ে আলমিরাতে কয়েকটি আঘাত করে। পরে তাকে দুপচাঁচিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ব্যাপারে বড় ভাই নাজমুস সাকিব দুপচাঁচিয়া থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

গত বুধবার বিকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং নিহতের ছেলে সাদকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চান। বিচারক সুমাইয়া সিদ্দিকা তিন দিনের রিমান্ড দেন।

এদিকে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন সাদ বিন আজিজুর র্যাবের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি অস্বীকার করে। সাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে ডিবি ও দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উম্মে সালমা খাতুনের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উন্মোচন ও ঘাতকদের শনাক্ত করে।

বৃহস্পতিবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। প্রথমে নিহতের বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে মাবিয়া সুলতানা হাসিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে উপজেলার চালুচ গ্রাম থেকে মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ শুক্রবার নিহত উম্মে সালমার দুটি মোবাইল ফোন, তাদের বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও একটি চাবি উদ্ধার করেছে।

ডিবি ও থানা পুলিশ জানায়, গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা, ফ্রিজে লাশ গুম ও ডাকাতির কাজ হিসেবে বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ এবং আলমিরাতে কুড়ালের কয়েকটি আঘাত করার কথা স্বীকার করে। হত্যার কারণ হিসেবে তাদের অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার ও অন্যরা জানান, মাবিয়া সুলতানা হাসি প্রায় সাত মাস আগে দুপচাঁচিয়া উপজেলার জয়পুরপাড়া এলাকায় উপাধ্যক্ষ মাওলানা আজিজুর রহমানের আজিজিয়া ভবনের চতুর্থ তলা ভাড়া নেন। হাসি ও অপর দুজন বাড়িতে অনৈতিক কাজ ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা, ছিনতাই, বিভিন্ন অপরাধ করে আসছেন। টের পেয়ে সালমা তাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এতেই মাবিয়া অন্য দুজনের সহযোগিতায় উম্মে সালমাকে শ্বাসরোধে হত্যা ও লাশ ফ্রিজে রেখে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে নিহতের দুটি মোবাইল ফোন, বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও দরজার চাবি নিয়ে যায়। গ্রেফতার তিনজনের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্ত শেষ হলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্তে নিহতের ছেলে সাদ বিন আজিজুরের সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ যাবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুপচাঁচিয়া থানার এসআই সুব্রত সিং জানান, গ্রেফতার তিন আসামিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য শুক্রবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়েছে। বিকাল ৫টায় এ খবর পাঠানো পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম চলছিল।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম