ফ্যাসিস্ট আ.লীগ সরকারের আমলে সব মিডিয়া গণজাগরণ মঞ্চকে প্রমোট করেছে
মাহমুদুর রহমান
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে সব মতের সত্য তথ্য প্রকাশ। তাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে দিল্লির পক্ষে নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, ২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনগণের পক্ষে তথ্য নির্ভর সাংবাদিকতা করা যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এমন সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে সরকারকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন আরপিইউজের উদ্যোগে ক্লাব মিলনায়তনে ‘বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে কেমন সংবাদমাধ্যম চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের সঞ্চালনায় এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, পরিচালক শাকিল ওয়াহেদ, আইইবি সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু।
বক্তব্য রাখেন- দৈনিক সংবাদ ও একুশে টিভির ব্যুরো প্রধান এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, আমাদের প্রতিদিনের সম্পাদক এবং দৈনিক যুগান্তরের রংপুর ব্যুরো প্রধান মাহবুব রহমান হাবু, দৈনিক দাবানলের সম্পাদক খন্দকার মোস্তফা সরওয়ার অনু, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর হোসেন, এটিএন নিউজের রংপুর প্রতিনিধি মাহবুবুল ইসলাম, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে সহ-সভাপতি চঞ্চল মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মানিক, সিটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির মানিক, দৈনিক বায়ান্নর আলোর সম্পাদক তাজিদুল ইসলাম লাল, মোহনা টিভির ব্যুরো প্রধান শফিউল করিম শফিক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে দপ্তর সম্পাদক হারুন উর রশিদ সোহেল প্রমুখ।
এ সময় রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা, প্রিন্ট-ইলেট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ১১ বছর আগে শাহবাগের ঘটনা নিয়ে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনির তথ্য বাংলাদেশকে দিয়েছিল দৈনিক আমার দেশ। এখন সেই ফ্যাসিবাদ শব্দটাই সবার মুখে মুখে। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের দিন নিউজপ্যাডে পেন্সিল দিয়ে লিখে দিয়েছিলাম হেডলাইন হবে ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। সম্পাদক হিসেবে আমার কাছে থাকা তথ্য এবং ফিলোসফি দিয়ে আমি সেই হেডলাইন বানিয়েছিলাম। আমার কাছে তথ্য ছিল ভারতীয় দূতাবাস থেকে ওই জাগরণের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সায় ছিল পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেই বিপ্লবের মহানায়ক আবু সাঈদ হাসিনার জল্লাদদের সামনে বুক পেতে দিয়ে আত্মত্যাগের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু এককভাবে শেখ হাসিনাই ফ্যাসিবাদ কায়েম করেনি। এতে আমাদের সকলের অংশগ্রহণ ছিল। সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমও দায় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের আমলে সত্য প্রচারে সাংবাদিকদের ওপর যে চাপ ছিল তা থেকে আমরা মুক্ত হয়ে নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের সত্য প্রচারে নির্ভীক হতে হবে। আমরা এমন সাংবাদিকতা দেখতে চাই যেখানে সাংবাদিকেরা হবেন কর্পোরেট প্রভাব থেকে মুক্ত। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এজন্য আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পাদকদের রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সকল মিডিয়া গণজাগরণ মঞ্চকে প্রমোট করছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার আমাকে নানাভাবে হত্যাচেষ্টা করেছে, আমার ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। মামলা দিয়েছে। এখন সময় এসেছে, আমাদের স্বাধীন সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্কাইপি কেলেঙ্কারির অভিযোগে ডিজিটাল আইনের পিতা আইন তথ্য প্রযুক্তি আইন ৫৭/৫৮ ধারায় আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে এক নাম্বার আসামি করে মামলা করে। তথ্য প্রযুক্তি আইনের সন্তান হলো সাইবার নিরাপত্তা আইন। আপনারা সাংবাদিকরা এখন এ আইন নিয়ে কোনো কথা বলেন না।
তিনি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক-বার্তা সম্পাদকদের উদ্দেশে বলেন, কর্পোরেট প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কেউ যেন আমাদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ যেন হাসিল করতে না পারে, সেই ব্যাপারে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এর আগে শুক্রবার সকালে মাহমুদুর রহমানকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের নেতৃবৃন্দ। পরে তিনি পীরগঞ্জে শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।