এবার আরিচায় বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজারের গুদামে রহস্যজনক আগুন
মতিউর রহমান,মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ পিএম
নারায়নগঞ্জে দুই দফার পর এবার মানিকগঞ্জের আরিচাঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) এর ড্রেজিং ইউনিটের ড্রেজার বেইজ অফিসের সামনে রাখা পাইপের ফ্লোটারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে এ অগ্নিকাণ্ডটিকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিনেই নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছন্দা পাল স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথাও জানানো হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) ড্রেজিং ইউনিটের নারায়নগঞ্জ ড্রেজার বেইজের উন্মুক্ত স্থানে রাখা পাইপের গোডাউনে ও তার আগে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর দুবার দিনের বেলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
সূত্র মতে, নারায়নগঞ্জ শহরের খানপুর বরফকল এলাকায় বিআইডাব্লিউটিএ’র স্টক ইয়ার্ডে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়।
সুত্র জানিয়েছে, অজ্ঞাত কারণে তখনকার সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এর আগের পৃথক দুইবার বিআইডাব্লিউটিএ’র সংরক্ষিত এলাকায় সরকারি ছুটির দিনে আগুন লাগার ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মনে করেন স্বয়ং প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন ঘটনাস্থলের ক্যামেরা সচল ছিলনা। তবে বাকি সব সিসি ক্যামেরা সচল ছিল। বিষয়টি সবার কাছেই রহস্যজনক মনে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজিং ইউনিটের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এখান থেকে মূল্যবান পাইপসহ বিভিন্ন মালামাল বের করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর পেছনে কাজ করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্টরা মালামালের হিসাব না মিলাতে পেরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র কেন্দ্রীয় সদস্য (অর্থ) এম রাফিউল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, আগুন লাগার স্থানের সিসি ক্যামেরা কেন চলছে না বা আগুন কেউ উদ্দেশ্যমূলক লাগিয়েছে কিনা এবং বিআইডাব্লিউটিএ’র কেউ জড়িত আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আরিচায় একই স্টাইলে ড্রেজিং ইউনিটের পাইপে আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করতে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (টিএ) আহবায়ক ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে (মেরিন) সদস্য সচিব করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারের (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার) একজন প্রতিনিধি, শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ড্রেজিং), এনএসআইয়ের একজন প্রতিনিধি ও ডিজিএফআইয়ের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন।
ওই অফিস আদেশে তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটন, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়-দায়িত্ব নিরুপণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে করণীয় নির্ধারণসহ নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর সুস্পষ্ট সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এর আগে (১৪ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার আরিচাঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) এর ড্রেজার বেইজ অফিসের উন্মুক্ত যমুনার পাড়ে সারিবদ্ধভাবে রাখা ওই ফ্লোটারে হঠাৎ আগুন লাগার ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে করছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) এর ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) মো. শরিফুল ইসলাম শুক্রবার সকালে যুগান্তরকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হলে স্থানীয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস একঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি জানিয়েছেন, এলাকাটি সংরক্ষিত এবং সিসি ক্যামেরা আওতাভুক্ত ছিল। সেখানে পৃথক চারটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তার দাবি দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা সিসি টিভি ফুটেজে তেমনটি দেখেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ড্রেজারে পাইপগুলো প্লাস্টিকের হওয়ায় মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বিপুল সংখ্যক ফ্লোটার পুড়ে গেছে।
বিআইডাব্লিউটিএ আরিচা ড্রেজিং বেইজের এক কর্মকর্তা বলেন, অন্তত পাঁচ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে খবর পেয়ে শিবালয় ও ঘিওর উপজেলার তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হচ্ছে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি বলে তিনি জানান।