‘সিডরের’ ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়া করে উপকূলবাসীর
নাঈম হোসেন, উপকূলীয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ এএম
ছবি: যুগান্তর
আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। ওই সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর ও ঝালকাঠি জেলা। তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রায় ৩১ জেলায়। এতে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
স্বজন হারানোর বেদনায় আজও কাঁদেন উপকূলবাসী। ওইদিন উপকূলের লাখো মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। স্বজনহারা মানুষের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সিডরের তাণ্ডবে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয় দেশের দুই শতাধিক উপজেলা। বিধ্বস্ত হয় ৬ লাখ মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক, নৌ, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগসহ নানা অবকাঠামো।
১৭ বছর পরেও সেই প্রলয়ংকারী তাণ্ডবলীলার কথা মনে করে এখনও আতকে ওঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা জাফর আলী হাওলাদার বলেন, সিডরের সময় যে দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছি এবং চারদিকে স্বজন ও গৃহহারা মানুষের যে আর্তনাদ দেখেছি তা কখনো ভুলতে পারব না।
জানতে চাইলে দুর্যোগপ্রবণ উপজেলা রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান জানান, উপকূলের মানুষকে সবসময়ই ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। এজন্য উপকূলীয় ১৯টি জেলার মানুষের অধিকার ও ন্যায্যতা নিয়ে কাজ করতে উপকূলীয় মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি করেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম আরিফ বলেন, সিডর ও সত্তরের ঘূর্নিঝড়ের দুঃসহ স্মৃতি আজও এ অঞ্চলের মানুষকে তাড়া করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় জেলাসমূহের জন্য কথা বলতে ও কাজ করতে বছরের একটি দিনকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি। এ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান এ সাংবাদিক নেতা।
যোগাযোগ করা হলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা ডিন অধ্যাপক (অব) আ.ক.ম মোস্তাফা জামান যুগান্তরকে বলেন, বারবার ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানার বিষয়টি মাথায় রেখেই পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিক শিক্ষা ও পদ্ধতি উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া দুর্যোগে যাতে কম ক্ষয়ক্ষতি হয় সেজন্য সরকারকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। একই সঙ্গে বিশাল উপকূলীয় এলাকার মানুষের সংগ্রামী জীবনযাপন স্মরনে দ্রুত ‘উপকূল দিবস’ ঘোষণাসহ নানা জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।