দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মো. শাহীন মিয়া (৩৫) নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিহত শাহীনের দ্বিতীয় স্ত্রী ঝুমুর আক্তার ওরফে ঝর্ণাকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে কটিয়াদী পৌর সভার পশ্চিমপাড়া মহল্লায়।
নিহত শাহীন উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের পাইকশা গ্রামের মো. তৈয়ব উদ্দিনের একমাত্র ছেলে।
জানা যায়, শাহীন মিয়া তিন কন্যা সন্তানের জনক। এক বছর পূর্বে কটিয়াদী পশ্চিমপাড়া মহল্লার আবুল হোসেনের মেয়ে দুই সন্তানের জননী ঝর্ণাকে ঘটনাক্রমে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় বিয়ের করার পর থেকেই পশ্চিমপাড়া মহল্লায় স্ত্রী ঝর্নার বাবার বাড়ির পাশে ভাড়া বাসা সৌদিয়া ভবনের পাঁচতলায় শাহীন বসবাস করতেন। দুজনেই স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতেন।
দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রী ও পিতা মাতার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শাহীনের। প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া সন্তানদেরকে নিয়ে কামারকোনা মহল্লায় পৃথক বাসায় থাকতেন। শাহীন মাঝে মধ্যে সন্তানদেরকে দেখার জন্য প্রথম স্ত্রীর বাসায় যেতো। বুধবার সন্ধ্যায় সন্তানদেরকে দেখার জন্য প্রথম স্ত্রীর বাসায় গিয়েছিল শাহীন। প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়ার বাসায় দেখা করতে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঝর্ণা তার স্বামী শহীনের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়।
স্বামীকে শায়েস্তা করতে চেতনানাশক দ্রব্য সেবন করিয়ে গভীর রাতে তাকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের লোকজন।
ঘটনার পর শাহীন গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঝর্ণা তার মাকে সংবাদ দেয়। ভোর ৪টার দিকে তার মা বাসার মালিক শাহ আলমকে ডেকে আনেন। শাহ আলম এসে কি হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানান, জামাই শাহীন রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। শুনে শাহ আলমসহ ঝর্ণার মা পাঁচতলায় যান।
বাড়ির মালিক শাহ আলম জানান, পাঁচতলায় শাহীনকে ফ্লোরে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশে তার স্ত্রী ঝর্না বসে আছে। পরে মা মেয়ে তাকে তুলে নিয়ে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার স্বামী আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করলেও প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া ও শাহীনের পিতা মাতা ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। তারা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
শাহীনের পিতা মো. তৈয়ব উদ্দিন জানান, শাহীন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে আবার বিয়ে করায় আমাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে ছেলে প্রায় সময়ই তার মাকে বলতো ঝর্ণা তার বন্ধু ও স্বজনদের নিয়ে তাকে নির্যাতন করতো। এতে সে মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে গত কিছুদিন পূর্বে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করেছে। কিন্তু ঝর্ণা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি।
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেহেদী হাসান জানান, ভোর ৫টায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন ইসিজি এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা দেখা যায়, বেশ কিছুক্ষণ আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ মো.তরিকুল ইসলাম জানান, শাহীনের লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্ত্রী ঝুমুর ওরফে ঝর্ণাকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।