Logo
Logo
×

সারাদেশ

মাদ্রাসায় ১৪ শিক্ষকের ১৩ শিক্ষার্থী, পাশ করেনি কেউ

Icon

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পিএম

মাদ্রাসায় ১৪ শিক্ষকের ১৩ শিক্ষার্থী, পাশ করেনি কেউ

সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসার সব পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এ মাদ্রাসায় ১৪ জন শিক্ষক আছেন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৩ শিক্ষার্থী; যারা কেউ পাশ করেনি।

জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হয়। মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে সহকারী অধ্যক্ষসহ ১৪ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী রয়েছেন। প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন নিচ্ছেন সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা। প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটিতে রেজাল্টের অবস্থা খুবই খারাপ। ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বহীনতা ও শিক্ষকদের চরম অবহেলায় বহু বছর ধরেই শিক্ষার্থী প্রায় শূন্যের কোঠায়।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের কোঠা ধরে রাখতে যুগ-যুগ ধরে ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়। যে কারণে বিভিন্ন সময় ২-৩ জন ছাড়া সবাই অকৃতকার্য হয়ে আসছে।

প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ক্ষোভের সঙ্গে ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পরীক্ষার হল থেকে ভাড়া করা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারও করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যেসব শিক্ষকরা অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন তাদের থেকে সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জুরুল হক ১০ হাজার করে টাকা নিতেন বলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া জানান।

একাধিকবার সরেজমিন গেলে এ মাদ্রাসায় ২-৬ জনের বেশি কখনই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। এমনকি বইগুলো বিভিন্ন কক্ষে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পাঠদান না দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদেরও একস্থানে বসে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে।

সহকারী সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুম বিল্লাহসহ একাধিক শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের এমন দৈন্যদশার জন্য সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতিদের দায়ী করছেন। ম্যানেজিং কমিটি আপনাদের পাঠদানে বাঁধা দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব কেউ দিতে পারেননি।

স্থানীয়রা বলছেন, মাদ্রাসাটি প্রতিদিন খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা গল্পগুজব করে সময় কাটিয়ে বাড়িতে চলে যান। বছরের দুই এক সময় অফিসারেরা আসেন আবার চলে যান। প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নতি দেখলাম না। প্রতিষ্ঠানের এমন দৈন্যদশা সম্পর্কে একাধিকবার লেখালেখি হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুস্তুম আলী বলেন, ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ১৩ জন। একজনও পাশ করল না, বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখা প্রয়োজন।

ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জুরুল কবির শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কারণে মাদ্রাসার এ অবস্থা। পাঠদানে কেউ বাধা তো দেয়নি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর একেএম আবুল খায়ের বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণে মাদ্রাসাটির এ অবস্থা। আমি চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানের মান ফিরিয়ে আনার জন্য।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম