মনিরামপুরে স্কুলে অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত শতাধিক শিক্ষার্থী
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
যশোরের মনিরামপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানকালে শতাধিক শিশু আকস্মিক চুলকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার পৌর শহরের মনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরে আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল প্রিয়া বিদ্যালয়ে সমাবেশের পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে শুরু করে। একপর্যায়ে চুলকানোর জায়গায় লাল র্যাশ দৃশ্যমান হয়। এ অবস্থা দেখে সহপাঠী জিম এগিয়ে গিয়ে জান্নাতুলের চুলকানোর জায়গায় হাত দিতেই তারও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে শুরু করে। জিমের শরীরেও একই উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
কিছুক্ষণের মধ্যে একই উপসর্গ নিয়ে স্কুলের শতাধিক শিশু হাসপাতালে আসে। এ সময় হাসপাতালে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় চিকিৎসকরা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার জানান, সমাবেশ শেষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে জান্নাতুল প্রিয়া নামের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রথমে আক্রান্ত হয়। পরপরই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়।
অভিভাবক দেবাশীষ দেবনাথ বলেন, তার ছেলে দিপ্র সুস্থ শরীরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর এ রোগে আক্রান্ত হয়। তিনি আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থী একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে। তিনি এটিকে অ্যানাফিল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তবে একসঙ্গে এত শিক্ষার্থী একই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক মনে করছেন না তিনি। এজন্য এই রোগটি নিয়ে তদন্তপূর্বক গবেষণার দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে গরুবাহী বিপুলসংখ্যক নছিমন, আলমসাধুসহ নানা ধরনের যানবাহন দেখতে পান। শিক্ষার্থীরা ওই যানবাহনে উঠে খেলাধুলা করে। তিনি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, রোগাক্রান্ত কোনো পশুবাহী যানবাহনের সংস্পর্শ হতে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাৎক্ষণিক তিনি মাঠে যানবাহন না রাখতে নির্দেশ দেন।
বিষয়টি তদন্তে হাসপাতালের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ডা. হুমায়ুন কবীর, সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল বাশার উমর ফারুক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদারের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু মোত্তালেব আলম নিশ্চিত করেছেন।