সরকারি জমি দখল করে নাবিল গ্রুপের দুধের খামার, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গড়িমসি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ পবা উপজেলার মাহিন্দা এলাকায় কিছু পরিমাণ জমি কিনে, এর সঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে গবাদি পশু ও দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছে নাবিল গ্রুপ।
যুগান্তরে গত ২ অক্টোবর ‘নাবিল গ্রুপ : সরকারি জমি দখল করে করেছে ডেইরি ফার্ম’ শিরোনামে খবর প্রকাশের পর বহুল আলোচিত নাবিল গ্রুপের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে রহস্যজনক কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে নাবিল গ্রুপের মালিক আমিনুল ইসলাম স্বপন গত কয়েক বছরে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রাজশাহীজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেন।
বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ইসলামি ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করেন। সেই প্রভাবে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
অভিযোগ মতে, গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরও নাবিল গ্রুপের প্রভাব কমেনি। এ কারণে আলোচিত গ্রুপটির সব অবৈধ কর্মকাণ্ড এখনো বহাল রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর উপকণ্ঠ পবা উপজেলার মাহিন্দ্রা এলাকায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি দখল করে বছরতিনেক আগে একটি ডেইরি ফার্ম করে নাবিল গ্রুপ। এরপর গ্র“পটি সেই জমি ইজারা নেওয়ার জন্য রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি আবেদন জমা দেয়। কিন্তু সওজ দখল করা জমি নাবিল গ্র“পকে ইজারা দেয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে দখল করা জমি থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে কয়েকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে নাবিল গ্র“পকে নোটিশ দেয়। কিন্তু অদ্যাবধি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি বহুল আলোচিত গ্রুপটি।
জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর রাজশাহী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম নাবিল গ্রুপের দখল করা জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। অনুরোধপত্রে সাতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহরাব হোসেন জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের পত্রটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ৩ নভেম্বর পবার সহকারী কমিশনারকে (এসিল্যান্ড) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, সবকিছু প্রস্তুত হলেও এখনো নাবিলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসনের ভ‚মিকাতেও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা সরাসরি নিজেরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারি না। এ জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দরকার। আমরা পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি পাঠিয়েছি। তারা সময় দিলেই আমরা উচ্ছেদ শুরু করব।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগে আরও জানা গেছে, নাবিল গ্রুপ প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গড়িমসি করছে। ইতোমধ্যে নাবিল গ্র“পকে একাধিকবার নোটিশ পাঠিয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হলেও তারা সেটি করেনি।
কেন অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন না জানতে চাইলে নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা সড়ক ও জনপথের ওই জায়গাটুকু লিজ নেওয়ার আবেদন করেছি। সওজ সড়ক সংলগ্ন অব্যবহৃত জায়গা লিজ দিতে পারে এমন নিয়ম আছে। আমরাও সরকারি নিয়মের মধ্যে লিজ নিতে চেয়েছি। যদি সওজ না দেয় তখন আমরাই সরিয়ে নেব।