সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ১৫ দিনের রিমান্ডে, মারা হলো ডিম
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম
টাঙ্গাইলে পৃথক দুইটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরে ওই তিনটি মামলায় আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মো. আব্দুর রাজ্জাককে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এ সময় তার বিচারের দাবিতে বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী এবং গণঅধিকার পরিষদ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীরা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারেন।
আদালত সূত্র জানায়, আব্দুর রাজ্জাককে প্রথমে মধুপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তাকে গত ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো এবং সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলা সদরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়। এই ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর মো. জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মধুপুর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণের জন্য মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে। সেখানে টাঙ্গাইল শহরে গত ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো এবং ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পশুপতি বিশ্বাস আব্দুর রাজ্জাককে মারুফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো এবং পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরের মেইন রোডে ছাত্র জনতা বিজয় মিছিল বের করে। ওই মিছিলে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্কুল ছাত্র মারুফ নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়।
শেষে আব্দুর রাজ্জাককে মির্জাপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে পুলিশ মির্জাপুরে গুলিতে নিহত কলেজছাত্র ইমন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো এবং ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক ইসমত আরা আব্দুর রাজ্জাককে ইমন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন এবং পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে কলেজ ছাত্র ইমন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ আগস্ট ইমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় গত ১৯ আগস্ট হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়।
আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বারের সভাপতি একেএম শামীমুল আক্তারসহ প্রায় ২৫ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। তারা আব্দুর রাজ্জাকের জামিন প্রার্থনা করেন।
অপরদিকে টাঙ্গাইলের নবনিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিকুল ইসলাম রিপনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের জামিনের বিরোধিতা করেন।
আব্দুর রাজ্জাককে আদালতে হাজির করা হবে- এ খবর পাওয়ার পর সকাল থেকেই বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা, জামায়াত ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা আদালত এলাকায় অবস্থান নেন। তারা আদালতে প্রবেশের বিভিন্ন পথে অবস্থান করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় মিছিলও বের করেন।
বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে আব্দুর রাজ্জাককে বহনকারী প্রিজনভ্যান আদালত এলাকায় প্রবেশ করে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় ওই ভ্যান ঘিরে আব্দুর রাজ্জাকের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারেন। তাকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহম্মেদ।