Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে কারণে স্থিতিশীল হচ্ছে না আলু-পেঁয়াজের বাজার

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ পিএম

যে কারণে স্থিতিশীল হচ্ছে না আলু-পেঁয়াজের বাজার

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে পেঁয়াজ ও আলুর বাজার সিন্ডিকেটের কবলে। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে এ পণ্য দুটির বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন টাস্কফোর্স গঠন করলেও সিন্ডিকেট রোধ করতে পারছে না। আলু ও পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় আরও বেড়েছে। নগরীতে খুচরা বাজারে আলু কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। পেঁয়াজ ও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে গত বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু এরপরও দামে কোনো প্রভাব নেই। আরও উলটো বাড়ছে। পেঁয়াজ ও আলুর পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও। তবে কিছুটা কমেছে শীতকালীন সবজির দাম।

এদিকে আলুর আড়তদাররা বলছেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন আড়তে আলু অনেকটা শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে আড়তদার বা পাইকাররা আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে দাম বাড়ছে হু হু করে।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা পর্যায়েও টাস্কফোর্স কমিটি ব্যাপকভাবে বাজার মনিটরিং করছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা-যে কোনো মূল্যে সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। টাস্কফোর্সের সদস্যরা প্রতিদিনই বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছেন। তারা এখনো সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাচ্ছেন না। দাম অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বাভাবিকে না এলে আগামী দিনগুলোতে টাস্কফোর্স আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে। প্রয়োজনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে শুল্ক-কর প্রত্যাহার হলেও পেঁয়াজের দাম কমছে না। আমদানিকারকরা অতিরিক্ত দামে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। এ কারণে পাইকাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

আমদানি হওয়ার পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম আবার বেড়েছে। আমদানিকারকরা কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নগরীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকার বেশি দামে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে। তবে মানভেদে ৫ টাকা কমবেশি রয়েছে।

পেঁয়াজের মতো আলুর দামও বেড়েছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে গুদামভর্তি আলু থাকার পরও বেড়েছে দাম। খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহে আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া আলু আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আলুর বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকায় দাম কমছে না।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের আলুর আড়তদার শামীম হোসেন বলেন, ‘আলুর বাজারে সিন্ডিকেট রয়েছে এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। সিন্ডিকেট ছাড়াও হিমাগার ফটকে আলুর দাম বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। কৃষকের ঘরের আলু প্রায় শেষ। হিমাগারেও মজুত শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া মৌসুমে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা তাড়াতাড়ি আলু তুলে ফেলেছেন। এজন্য কিছুটা কম হয়েছে ফলন। সাধারণত নভেম্বরে আগাম জাতের আলু বাজারে আসে। এবার অতিবৃষ্টির কারণে কৃষক ঠিক সময়ে বীজ লাগাতে পারেননি। সরকার থেকে সময়মতো বীজ না পাওয়ায় দুই সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে আগাম আলুর আবাদ। আলুর দাম বাড়ার জন্য এসব কারণও রয়েছে।

চালের দামও বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নতুন করে বেড়েছে। পাহাড়তলী ও চাক্তাই পাইকারি চালের বাজারে অসাধু মিল মালিক ও আড়তদাররা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশি বেড়েছে মোটা চাল। নগরীর বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটিস্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৬ টাকায়। মাঝারি চালের (বিআর-২৮ ও পাইজাম) কেজি ৬০ থেকে ৬৫ এবং চিকন চালের (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অথচ চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।

বাজারদর : শীতকালিন সবজি বাজারে আসায় কিছুটা কমেছে দাম। নগরীর কাঁচাবাজারে ঢ্যাঁড়শ, ধুন্দল কেজি ৬০ টাকা, পটোল কেজি ৫০ টাকায়, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, করলা ৬০ থকে ৭০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, কচুমুখি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাগরে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় মাছের সরবরাহ বেড়েছে। পাঙাশ-তেলাপিয়া ছাড়া বাকি সব মাছ প্রকারভেদে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঙাশ ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, লইট্যা ১৭০-১৮০ টাকা, কই মাছ ২০০ টাকা এবং রুই ২৫০-৩০০ টাকা। চিংড়ি প্রকারভেদে কেজিতে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম