মডেল মসজিদ নির্মাণ না করেই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার
খোন্দকার রুহুল আমিন, টেকেরহাট (মাদারীপুর)
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম
ফাইল ছবি
মাদারীপুরে সদর উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ না করেই এক কোটি ২৮ লাখ টাকা বিল নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিয়ম মোতাবেক এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সদর উপজেলার মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। শুধু পাইলিং করে তাদের বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জায়গা নির্ধারণ জটিলতায় মসজিদ নির্মাণ কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের।
এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা। যদিও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, পূর্বের স্থানেই শিগগির মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভেতরে তিনতলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২১ সালে শেষ হয় শুধু পাইলিংয়ের কাজ। এরপর ঝোপঝাড় আর কাশবনে ছেয়ে গেছে প্রকল্প এলাকা। আবার কোথাও পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অথচ এখানেই হওয়ার কথা ছিল মডেল মসজিদ ও ইসলমিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
পরে মসজিদ নির্মাণের জায়গা পরিবর্তনের জন্য ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। এতেই বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কার্যক্রম। আর এ সুযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খানের যোগসাজশে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকারও বেশি বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা বলছেন, প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই পিছিয়ে আছে মডেল মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম। আর নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে এর কার্যক্রম শিগগিরই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় গণপূর্ত অধিদপ্তর।
সূত্রমতে, ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজটি পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। চলতি বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদ নির্মাণ কাজ করবে না বলে চিঠি দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে জানিয়েও দিয়েছে। অথচ দুই ধাপে এক কোটি ২৮ লাখ টাকা নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিনেও মডেল মসজিদ নির্মাণ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন মুসল্লিরা।
সদর উপজেলার ভেতরে অবস্থিত পুরোনো মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মো. মামুন বলেন, অনেক দিন আগে দেখেছিলাম মসজিদের নির্মাণ কাজের সামগ্রী আনা হয়েছিল। কিন্তু এরপর কী কারণে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে না এটা আমাদের বোধগম্য নয়। পুরাতন মসজিদটিতে এখন নামাজ পড়া কষ্ট। বেশি পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে মুসল্লিরা সেখানেই নামাজ পড়ছেন। মুসল্লি রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মডেল মসজিদ উদ্বোধন হলেও আমাদের সদর উপজেলায় দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই।
এতে আমরা আধুনিক মসজিদে নামাজ পড়তে পারছি না। মুসল্লিদের মতামত ছাড়া উপজেলার ভেতরে মসজিদ নির্মাণ শুরু করলেও পাঁচ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এ ঘটনায় কারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। করিম শেখ নামে একজন বলেন, মুসল্লিদের দাবি ছিল পুরোনো মসজিদটি ভেঙে সেখানেই নতুন মডেল মসজিদ নির্মাণ করার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার নিজেদের ইচ্ছামতো উপজেলার অনেক ভেতরে নিয়ে মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
দীর্ঘদিনেও মডেল মসজিদ নির্মাণ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের বিচার দাবি করছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাদারীপুরের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন জেলার উপজেলাগুলোর মডেল মসজিদ নির্মাণ হয়ে উদ্বোধন হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু মাদারীপুর সদর উপজেলার মসজিদটি পাঁচ বছরেও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো, সঠিক স্থানে এটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। উপজেলার ভেতরে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, এতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে মসজিদটি আসবে না, এছাড়া মুসল্লিরাও স্থানটি পছন্দ করেননি। তাই অন্যত্র মসজিদ নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় পূর্বের নির্ধারিত স্থানেই মসজিদ নির্মাণ করতে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে বলে দিয়েছে। তাই সেখানেই মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। মাদারীপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার হোসেন জানান, স্থান নির্ধারণ জটিলতায় মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ আছে। কিন্তু পূর্বের স্থানেই মসজিদ নির্মাণ শুরু করতে হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চিঠি দিয়ে গণপূর্তকে জানিয়েছে। এছাড়া আগের কাজ পাওয়া ঠিকাদারও কাজ করবে না বলে জানিয়েছে। তাই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে পূর্বের নির্ধারিত স্থানে শিগগিরই মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। পূর্বের ঠিকাদার পাইলিংয়ের কাজ করে তার প্রাপ্ত বিল নিয়েছে। তাদের কোনো বাড়তি বিল দেওয়া হয়নি।