দেবর-ভাবির পরকীয়া, যেভাবে হত্যা করা হয় প্রবাসী উজ্জ্বলকে
যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ পিএম
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে প্রবাসী উজ্জ্বল মিয়া (৩০) হত্যাকাণ্ডের ২৬ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উন্মোচন করল পুলিশ। ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল দেবর-ভাবির পরকীয়া। প্রবাস থেকে দেশে ফেরার ৯ দিনের মাথায় নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী, আপন ভাইসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সিংগাইর উপজেলার সিংগাপুর প্রবাসী উজ্জ্বল মিয়া (৩০) বাড়িতে আসার ৯ দিনের মাথায় গত ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে নিখুঁজ ছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় উজ্জ্বল মিয়া নিখোঁজ হয়েছেন।
পুলিশ সুপার জানান, নিখোঁজের ১৮ দিন পর গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ব্রিজের পশ্চিম পাশে ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদ আলীর আবাদি জমিসংলগ্ন নদীতে পানিশূন্য কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সঙ্গে লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রেস বিফিংয়ের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল ওয়ারিশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুজন সরকার, সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, ক্লুলেস হত্যা মামলা হওয়ার পর মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. বশির আহমেদের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আব্দুল ওয়ারেসের তত্ত্বাবধানে ও অফিসার ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম ৬ নভেম্বর বুধবার উত্তর কাংশা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে এই ক্লুলেস হত্যা মামলার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত উজ্জ্বল মিয়ার স্ত্রী মোসা. কাঞ্চন ওরফে মনিরা (২৩), আপন ছোট ভাই মো. ঝন্টু (২৪) ও তার বন্ধু মাসুদকে (২২) গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, মো. ঝন্টু ও কাঞ্চনা ওরফে মনিরা সম্পর্কে দেবর-ভাবি। ঝন্টু ও তার আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়া উভয়েই সিঙ্গাপুর ছিলেন। সেখান থেকে ঝন্টু মোবাইল ফোনে তার ভাবি মনিরার সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরকীয়া সম্পর্কের টানে ঝন্টু তার ভাইকে সিঙ্গাপুরে রেখেই তড়িঘড়ি করে বাড়িতে চলে এসে তার ভাবি মনিরার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে থাকেন।
এদিকে ঘটনার ৯ দিন আগে উজ্জ্বল মিয়া সিঙ্গাপুর থেকে বাড়িতে চলে আসেন। ভাই বাড়ি ফিরে আসায় ঝন্টু ও ভাবি মনিরার পরকীয়ায় বিঘ্ন ঘটতে থাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেবর ও ভাবি মিলে উজ্জ্বল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পূর্বপরিকল্পনা মাফিক ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মনিরা তার স্বামী উজ্জ্বলকে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। এতে উজ্জ্বল অচেতন হয়ে পড়লে ঝন্টু তার বন্ধু মাসুদকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমুতে কল করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর তিনজনে মিলে উজ্জ্বল মিয়াকে অচেতন অবস্থায় গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।
পরবর্তীতে আসামিরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল মিয়ার মৃতদেহ বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ঘটনাস্থল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। মাসুদ তার বাড়ি হতে নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ও ধারালো হাঁসুয়া নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ড্রামে কাদা মাটি ভরে ড্রামের সঙ্গে রশি দিয়ে উজ্জ্বল মিয়ার মৃতদেহ বেঁধে লাশ নৌকায় উঠিয়ে নদীর পাশে নিয়ে হাঁসুয়া দিয়ে লাশের বুক চিড়ে লাশ নদীর পানিতে ডুবিয়ে গুম করে।
গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।