৩ যুগ ধরে বিদ্যালয়ের ২৬ দোকানের ভাড়া ৫৪ টাকা করে, তাও বাকি
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ পিএম
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের বাকচান্দা আব্দুস সামাদ একাডেমির নিজস্ব জায়গায় গড়ে উঠা ২৬টি দোকান ভাড়াবাবদ প্রতি মাসে ভাড়া পাচ্ছে ৫৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা করে। বিগত ৩৫ বছর (প্রায় ৩ যুগ) যাবত এভাবেই দোকান ভাড়ার টাকা পাচ্ছে অত্র মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাও বাকি পড়ে রয়েছে।
নামমাত্র দোকান ভাড়া দেখিয়ে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আঁতাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত অসাধু চক্র। তবে বছরের পর বছর নামমাত্র ভাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ঠকানোর বিষয়ে কেউই মুখ খুলতে নারাজ।
সরজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, বাকচান্দা আব্দুস সামাদ একাডেমি (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ৮ একর জমি নিয়ে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলার সর্ব দক্ষিণে সিংরইল ইউপির বাকচান্দা বাজারের উত্তর পাশে নিজস্ব বিশাল মাঠের উত্তর পাশে বিদ্যালয়টির অবস্থান। বাজারের পশ্চিম পাশে প্রধান সড়কের দুই পাশে বিদ্যালয়ের জায়গায় ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে স্থানীয়রা অনুমতি নিয়ে ২৬টি দোকান ঘর নির্মাণ করে। সর্বোচ্চ ৮১০ ও সর্বনিন্ম ১৮৯ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট পাকা মেঝে টিনের বেড়ার এসব দোকানে কেউ কেউ নিজেরা ব্যবসা করছেন। কেউ কেউ আবার ৫ বছর মেয়াদের জন্য মোটা অংকের সিকিউরিটি মানি (নিরাপত্তা বন্ধক) নিয়ে অন্যকে দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় মাসিক ভাড়া দিয়ে রেখেছেন; কিন্তু সিকিউরিটি মানি দখলদাররাই নিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতিটি দোকান দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে মাসিক ভাড়া আদায় করলেও ঘর মালিক বিদ্যালয়কে প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া দিচ্ছেন ৫৪ থেকে ১০৮ টাকা। তার ওপর প্রতিটি দোকানেরই আবার মাসিক ভাড়া মোট ৬৩ হাজার ১২ টাকা বাকি পড়ে আছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এ অনিয়ম চলে আসলেও কর্তৃপক্ষ এর কোনো সুরাহা করতে পারছেন না। স্থানীয় এসব ব্যবসায়ীদের বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও মাসিক ভাড়া বাড়াতে বা তাদের উচ্ছেদ করতে পারছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অত্র প্রতিষ্ঠানের ১১নং দোকানের মালিক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি বিদ্যালয়ে মাসিক ভাড়া বাবদ দেন ৮০ টাকা। অথচ তিনি ৫০ হাজার টাকা সিকিউরিটি নিয়ে সোপান আলীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৭০০ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন। এ রকম প্রত্যেকটি দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়াদের একই অবস্থা।
বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে দোকান করে ভাড়া নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না।
অভিভাবক বাবুল মিয়া বলেন, আমরা কী বলব, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলে আসছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ জানান, তিনিসহ প্রতিটি কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা মিলে অনেক চেষ্টা করেও ভাড়া বাড়াতে বা তাদের উচ্ছেদ করতে পারছেন না। অথচ বিদ্যালয়ের দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাহিরের লোকজন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এখানে এসে দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়ে গেছেন।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি অরুণ কৃষ্ণ পাল জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি। খুব শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।