১৮ বছরের শিকলবন্দি জীবন জামির উদ্দিনের
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ এএম
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের আলীহরগাতী গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর ছেলে প্রতিবন্ধী জামির উদ্দিন ১৮ বছর যাবত শিকলবন্দি জীবন-যাপন করছেন।
মাথার সমস্যা থাকায় জামির উদ্দিন সাত বছর বয়স থেকে শিকলবন্দি হয়। টাকার অভাবে দরিদ্র পিতামাতা জামিরের সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
জানা গেছে, জামিরের পিতা দিনমজুর রমজান আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জামির উদ্দিন (২২) দ্বিতীয় সন্তান। তিনি বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
কিছুদিন পূর্বে মারা গেছেন তার একমাত্র বোন। জন্মের পর থেকে জামিরের মাথায় কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে তিনি পাগলের মতো আচরণ করতেন। কখনো বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে আবার ফিরে আসতেন। এ কারণে একবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। সেজন্য ঝামেলা এড়াতেই পরিবারের লোকজন প্রতিবেশীদের সহায়তায় তার পায়ে শিকল বেঁধে গাছের সঙ্গে তালা মেরে রেখেছেন।
সারাদিন বাড়ির আঙিনায় রোদ বৃষ্টি ঝড়ে একটি গাছের ছায়ায় তার থাকার নির্ধারিত জায়গা। সেখানেই গোছল, খাওয়া দাওয়া প্রাকৃতিক ডাকে সারা দেওয়া সবকিছু সম্পন্ন হয়। শুধু রাতেই ঘরে যাবার সুযোগ মেলে তার। সকল সেবা শুশ্রূষা তার বৃদ্ধ মা বাবা করে থাকেন।
জামিরের চাচা শামছুল ইসলাম জানান, ছেলেটাকে নিয়ে তার মা-বাবা খুব কষ্ট করছেন।
জামিরের মা জুলেখা আক্তার জানান, বৃদ্ধ বয়সে জামিরের সেবা শুশ্রূষা করতে গিয়ে তিনি হাঁপিয়ে উঠেন। টাকার অভাবে ছেলেটার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন মিয়া জানান, জামিরের বাবার ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। এছাড়া জামিরের একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। এসব দিয়ে কোনোক্রমে চলছে পরিবারটি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও মানসিক রোগ বিভাগের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সহকারী অধ্যাপক ডা. হেফজুল বারী খান বলেন, জামিরের মতো শতকরা ৮০ ভাগ রোগী চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। আশা করি জামিরও ভালো হবে; তবে এক্ষেত্রে তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন।