মিষ্টি পান চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে কৃষকের
আক্তারুজ্জামান বকুল, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
বাঙালির আতিথেয়তার অন্যতম অনুষঙ্গ পান। বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান,পালা-পার্বণ, বিয়েসহ যে কোন আয়োজনে সব শেষে যেন পান থাকতেই হবে।
সেই ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির ছড়ার মতো বলতে হয়, বাটাভরে পান দেবো গালভরে খেয়ো। সেই অপরিহার্য রাজশাহীর মিষ্টি পান চাষ করে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক জহিরুল ইসলাম (৩৮)।
পান চাষে অভিশাপ নামক দারিদ্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। পান চাষি জহিরুল এখন একটি নাম একটি উদাহরণ। পান চাষে তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এ চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। পানচাষী জহিরুল ইসলাম উপজেলার মামুদ নগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত সরব আলীর ছেলে।
জানা যায়, দরিদ্র কৃষক জহিরুল ইসলামের স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। তার সংসারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। কঠোর পরিশ্রম করেও সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারেনি। অভাব যেন কোনোভাবেই তার পিছু ছাড়ছে না। অন্যের দোকানে টেইলারিং (দর্জি) করে কোন রকমে দিনাতিপাত করে আসছিল। অবশেষে এক বন্ধুর পরামর্শে রাজশাহী থেকে সে প্রথম ৫ হাজার মিষ্টি জাতের পানের চারা এনে তার বাড়ির পাশে ২৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে রোপন করে। পান চাষ করে প্রথম বছরেই সে সুখের মুখ দেখেন।
সৌভাগ্য তার দরজায় কড়া নাড়তে থাকে। কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক পরিচর্যা যে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে কৃষক জহিরুল ইসলাম তার অনন্য উদাহরণ।
জহিরুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় আমিই প্রথম রাজশাহীর মিষ্টিপানের চাষ শুরু করি। রাজশাহী থেকে পানের ডগা এনে আমি ২৫ শতাংশ জমিতে পান রোপণ শুরু করি। পানের বরজ তৈরি করতে আমার মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। কোনো সমস্যা হলে রাজশাহীর চাষিদের পরামর্শ নেই। আমার কাছে কেউ যদি পান চাষের বিষয়ে সহযোগিতা চায় তাহলে আমি তাকে সহযোগিতা করব।
স্থানীয় মো. হামিদ খান জানান, জহিরুল অনেক কষ্ট করে রাজশাহী জেলার মিষ্টি পানের একটি বরজ তৈরি করেছে। আমরা এখান থেকে পান কিনে খাই। পানের স্বাদ রাজশাহীর পানের মতই। এলাকায় যদি তার মতো আরও উদ্যেক্তা তৈরি হয় তা হলে আমাদের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসাইন জানান, নাগরপুরে পান চাষে সফল মামুদ নগরের জহিরুল ইসলাম। তিনি তার ২৫ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেন। পান অর্থকরী ফসল। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক ভাবে তার পানের বাগান পরিদর্শন করি। সেই সাথে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে কারিগরি পরামর্শ দিয়ে থাকি। একই সঙ্গে নাগরপুর উপজেলার পান চাষে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।