ইলিশের প্রজনন রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে রোববার মধ্য রাতে। তাইতো এখানকার জেলেরা পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে নেমে গেছে। জেলেদের জালে ধৃত শুধু ইলিশই নয়, অন্য মাছও ধরা পড়ছে এখন।
নিষেধাজ্ঞার তিন সপ্তাহ পরে আবারো ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুর মাছ ঘাটের আড়তগুলো। নিষেধাজ্ঞার আগের চাইতে ইলিশের দামও এখন কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে।
সোমবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট গিয়ে দেখা গেছে আড়তগুলোতে ইলিশ নিয়ে আসছেন জেলেরা। আবার অনেক জেলে নৌকা ও জাল নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় বেরিয়ে পড়ছেন।
বরফ ছাড়া এসব ইলিশ জেলেদের উপস্থিতিতে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন আড়ৎদাররা। মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ইলিশ। পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে। তবে সংখ্যায় কম।
কুমিল্লা থেকে তাজা ইলিশ কিনতে চাঁদপুর মাছ ঘাটে এসেছেন তিনটি পরিবার। তাদের মধ্যে শিপন নামে একজন বলেন, এর আগেও এ মাছঘাটে এসেছি। অন্য সময় যখন এসেছিলাম তখন মিক্স অর্থাৎ নামার মাছকে লোকাল বলে আমাদের সঙ্গে প্রতারিত করেছে। তবে এবার দেখলাম সে রকমটি নেই। ছোট বড় ১৭ হাজার টাকার ইলিশ কিনেছেন তারা। দামও ভালো পেয়েছেন।
পাঙ্গাস মাছের পাইকারি বিক্রেতা কালু পাটওয়ারী বলেন, গত বছর এ সময়ে ইলিশের জালে অনেক পাঙ্গাস ধরা পড়েছে। এ বছর সংখ্যায় খুবই কম। আজকে ছোট সাইজের পাঙ্গাস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা এবং বড় সাইজের পাঙ্গাস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। জেলেদের ধরে আনা প্রতিটি পাঙ্গাসের ওজন ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৮-১০ কেজি।
ঘাটের আড়তদার সেলিম ছৈয়াল বলেন, আমাদের এই ঘাটে ইলিশ হালিতে বিক্রি হয়। ছোট সাইজের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। মাঝারি সাইজের (৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজন) এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা।
বলাখাল রামপুর বাজার থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন জহির হোসেন নামে ক্রেতা। তিনি বলেন, আজকে আগের তুলনায় দাম একটু কম আছে। ৪৫০ টাকা করে ৫ হালি ইলিশ কিনেছি। ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। নিষেধাজ্ঞার আগে এই সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
তিনি জানান, তবে ইলিশের সাইজ ছোট। বড় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। আবার কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ডিম ছেড়ে দেওয়া।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার জানান, আজ ঘাটে তিন-চারশ মণ ইলিশ এসেছে। হয়তো সামনে পরিমাণ বাড়তে পারে।তবে অধিকাংশ ইলিশ ডিম ছেড়ে দিছে বলে তিনি মনে করেন।
ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান ইলিশের প্রাপ্যতা সম্পর্কে বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। বছরজুড়েই ইলিশ ডিম ছাড়ে; কিন্তু এই সময়টাতে সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। তবে ইলিশের চলার পথ সুগম করলে নদীতেও বছরজুড়ে ইলিশ পাবেন জেলেরা।