বিয়ের দাবিতে দুই প্রেমিকার অনশন, কারো সঙ্গেই বিয়ে হলো না
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম
প্রেমিক একজন। প্রেমিকা দুইজন। বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেছিলেন তারা। শনিবার রাত ৮টা থেকে অনশন শুরু করেন দুই তরুণী। রোববার পালিয়ে গেছেন প্রেমিক। বাড়িতে তালা ঝুলছে। পরিবারের কেউ নেই সেখানে। দুই প্রেমিকাই হতাশ। ফিরে গেছেন তারাও।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের গাগান্না গ্রামে ইকরামুল হকের ভবঘুরে ছেলে শাহিনকে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেছিলেন তারা। ঘটনাটি নিয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের মাতুব্বর নুর আলী মোল্লা বলেন, শনিবার বিকালে পার্শ্ববর্তী হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে রুনা খাতুন প্রথম শাহিনের বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে সাদিয়া খাতুনও চলে আসেন। নুর আলীর ভাষায় দুইজনই বিয়ের দাবি তোলেন। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। রাত ৮টা থেকে বিয়ের দাবিতে দুই মেয়ে একসঙ্গে অনশন শুরু করেন।
তখন গ্রামের লোকজন শাহিনের বাড়িতে ছুটে আসেন। সাদিয়ার সঙ্গে প্রথমে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা; কিন্তু বিয়ের বয়স হয়নি সাদিয়ার। গভীর রাতে স্বজনরা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান সাদিয়াকে। অপরজন রুনা খাতুন থেকে যান। গ্রামের লোকজন এই মেয়ের সঙ্গেই শাহিনের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন; কিন্তু গভীর রাতে কাজি মেলেনি। রাতে বিয়ে দেওয়া হলো না। শাহিনের বাড়িতেই থাকতে দেওয়া হয় তাকে।
ভোর হতে না হতেই শাহিনসহ পরিবারের লোকজন ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান। নিরুপায় হয়ে সটকে পড়তে হয় তাকেও (রুনা খাতুন)।
হলিধানী ইউনিয়নের মেম্বার সন্তোষ কুমার জানান, রাতে সাদিয়া নামের মেয়েটি নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। সকালে অপরজন চলে যান।
অন্য প্রতিবেশীরা জানান, দীর্ঘ দুই বছর ধরে রুনার সঙ্গে শাহিনের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। দুই পরিবার বিয়েতে রাজি ছিল। এর আগে শাহিন গ্রামের ভিন্নধর্মে এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। মামলা হয় তার (শাহিন) নামে। এমন তথ্য পাওয়ার পরে রুনার সঙ্গে বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। পরিবার থেকে রুনাকে অন্য পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিতে গেলে শনিবার বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহিনের কাছে ছুটে আসেন। দুই মাস আগে শাহিনের পরিচয় হয়েছে অপর প্রেমিকা সাদিয়ার সঙ্গে। তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রুনা শাহিনের বাড়িতে এমন খবর পেয়ে সেও (সাদিয়া) ছুটে আসে শাহিনের বাড়িতে।
রুনা দাবি করেন- শাহিনের সঙ্গে দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক। বিয়েতে দুই পরিবারই রাজি ছিল। শাহীন ধর্ষণ মামলায় আসামি হওয়ায় বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। আমি শাহিন ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না। শাহিন ওই মেয়েকে (সাদিয়া) বিয়ে করলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
সাদিয়া খাতুন জানান, শাহিনের সঙ্গে দুই মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক। এর আগেও একবার শাহিনের বাড়িতে যাই। সেদিন শাহিনের বাড়ির লোকজন ঝামেলা করার কারণে বিয়ে হয়নি। শাহিনের বাড়িতে আরেক মেয়ে আসে। বিয়ের দাবি তারও। ওকে (শাহিন) ভালোবাসি। বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। শনিবার গ্রামবাসীর প্রশ্নের জবাবে শাহিন জানান- বিয়ের দাবিতে আসা দুই মেয়ের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল- এখন নেই।
রোববার সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের গাগান্না গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর দেখা যায়, কেউ নেই। তালা ঝুলছে ঘরের দরজায়। প্রতিবেশীদের বাড়িতেও পাওয়া গেল না তাদের। জানা গেল শেষ পর্যন্ত রুনা হতাশ হয়ে নিজ বাড়ি ফিরে গেছেন।