তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
যুগান্তর প্রতিবেদন,বরগুনা
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
ডেউয়া ফল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করায় ধর্ষককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
রোববার দুপুরে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র বিচারক ও জেলা জজ মো. মশিউর রহমান খান এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নে পোটকাখালী গ্রামের মিম আবাসনের মৃত লাল মিয়ার ছেলে মো. শাহিন (৩৫)।
রায় ঘোষণার সময় আসামি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, একই আবাসনের বাসিন্দা ভিকটিমের মা মোসা. রুমি বেগম বরগুনা থানায় ২০২২ সালের ২০ জুন অভিযোগ করেন- দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শাহিন ও আমি একই আবাসনে বসবাস করি। শাহিনের স্ত্রী দুই বছর আগে বিদেশে চলে যান। বাদীর তিন বছরের মেয়েকে শাহিন আদর করে দোকানে নিয়ে প্রায়ই চকলেট কিনে দিত। বাদী কিছু মনে করত না। ঘটনার দিন ২০২২ সালের ১৯ জুন বিকাল সোয়া তিনটায় শাহিন বাদীর মেয়েকে ডেউয়া ফল দেওয়ার কথা বলে তার ঘরে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর বাদীর মেয়ে পা ফাঁক করে কাঁদতে কাঁদত শাহিনের ঘর থেকে বের হয়। বাদী তার মেয়ের কান্নার কারণ জানতে চাইলে বলে দেয় শাহিন ভাইয়া আমাকে ব্যথা দিয়েছে। বাদী ভিকটিমের পরিহিত পাজামা খুলে দেখতে পায় তার মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষণের আলামত ভিকটিমের শরীরে রয়েছে। বাদী ডাকচিৎকার দিলে শাহিন দ্রুত পালিয়ে যায়।
বাদী ২০ জুন বরগুনা থানায় শাহিনকে আসামি করে মামলা করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপুলিশ পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল নোমান ২০২৩ সালের ২৮ জুন শাহিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এর আগে ভিকটিমের ডাক্তারি ও ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। বাদীপক্ষের ট্রাইব্যুনালে ৬ জন সাক্ষ্য দেয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, তিন বছরের ভিকটিম নিতান্তই নাবালিকা। তার ওপর আসামি মো. শাহিন যে পাশাবিক নির্যাতন করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য এবং আসামির ক্ষমা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মো. শাহিনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও (এক) বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
ভিকটিম নাবালিকা থাকায় তার পক্ষে ভিকটিমের মাতা এজাহারকারী মোসা. রুমি বেগম অর্থদণ্ডের টাকা প্রাপ্ত হবেন। ভিকটিম সাবালিকা হলে উক্ত টাকা তার কাছে হস্তান্তরের জন্য এজাহারকারীর ওপর নির্দেশ থাকবে।
বাদী বলেন, আমি রায়ে খুশি হয়েছি। তবে আমার মেয়ের কলঙ্ক কোনোদিন মুছে যাবে না। আসামি কোর্ট বারান্দায় বলে- এই রায়ের বিরুদ্ধে আমি আপিল করব।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। আজকাল শিশুরা বিভিন্ন সময় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এই মেসেজটি সবার কাছে পৌঁছলে অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।