Logo
Logo
×

সারাদেশ

দুই ছাত্রকে কবরস্থানে নিয়ে এ কী করলেন মাদ্রাসা শিক্ষক!

Icon

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পিএম

দুই ছাত্রকে কবরস্থানে নিয়ে এ কী করলেন মাদ্রাসা শিক্ষক!

রংপুরের তারাগঞ্জে এক শিক্ষকের (হুজুর) বিরুদ্ধে মাদ্রাসার দুই শিশু শিক্ষার্থীকে জুসের সঙ্গে বিষ খাইয়ে ছুরি দিয়ে হত্যা করার জন্য কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে শিশু দুইটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় ইমরান নামে এক শিশুর বাবা মাদ্রাসার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের পঞ্চায়েতপাড়া এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের পঞ্চায়েতপাড়া এলাকায় মদিনাতুল করমি লিল্লাহ বোর্ডিং মাদ্রাসায় অনিয়মিত শিক্ষক হিসেবে একই ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওই মাদ্রাসায় পঞ্চায়েতপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ইমরান হোসেন (১০) ও একই ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের খাজা মিয়ার ছেলে ইয়ামিন হোসেন (১১) আরবি শাখায় লেখাপড়া করে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোসেনকে অপর শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনকে তার বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় ডেকে আনতে বলেন। শিক্ষকের কথামতো ইয়ামিন হোসেন ইমরান হোসেনকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত হলে ওই শিক্ষক তাদের কবরের ভিতরে জিন দেখাবেন বলে মাদ্রাসা থেকে ৮০০ গজ দূরে একটি কবরস্থানে নিয়ে যায়। পরে কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে একটি গোল আকৃতির চুয়ার মতো গর্তে দুই শিশু শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দিয়ে তিনিও ওই গর্তে লাফ দিয়ে নেমে যান। গর্তের মধ্যে থাকা গোলাপ জল, আগরবাতি, ছুরি দেখতে পায় ওই শিশুরা। খানিক পরেই ওই শিশু দুইটির চোখ কালো কাপড় দিয়ে দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় এবং বলা হয় চোখ খোলার চেষ্টা করলে জিন তাদের পিতামাতার ক্ষতি করবেন। এই বলে জুস খাইতে বলেন ওই শিক্ষক।

এ সময় ইমরান হোসেন নামের শিশুটি বাড়িতে ভাত খেয়ে এসেছে বলে খাবে না জানালে শিক্ষক রাগান্বিত হয়ে ধমক দেয়। শিক্ষকের ধমক খেয়ে দুই শিশু জুস পান করে। জুস পান করার সময় ইমরান হোসেন বমি করেন। এতে ওই শিক্ষক দুই শিশুকে গালাগালি করতে থাকেন। ঠিক ওই সময় কবরস্থানের পাশের জমি থেকে একজন ছাগল আনতে যাওয়ার সময় কবরস্থানের পাশে গর্ত থেকে ভেসে আসা কথাবার্তা শুনতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পারেন শিশু দুইটি কান্নাকাটি করছে।

এ সময় ওই শিক্ষক গর্ত থেকে উঠে তার রাখা বাইসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে ইমরান হোসেনের পরিবারের লোকজন কবরস্থানের গর্ত থেকে দুই শিশুকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান এবং ঘটনার বিবরণ শোনার সময় শিশু দুটির গা থেকে বিষের গন্ধ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

সেখানকার চিকিৎসক শিশু দুটির অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

শুক্রবার ইমরানের মা ইয়াসমিন আরা জানান, বর্তমানে আমার ছরয়াটা আর ওই ছরয়াটা ভালো আছে। ভিডিও মোবাইল দিয়া কথাও কছু বাবা। মুই ওই হুজুরের বিচার চাও, মোর ছাওয়াক যদি কোনো কিছু করিল হয় তখন মুই মোর জাদু জানক কি করি পানুং হয়।

অভিযুক্ত শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে আজব ঘটনাটি লোকমুখে শুনে কবরস্থানটি দেখতে আশপাশের নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষ ছুটে এসে বলছেন দেশের আয়নাঘর এইটা।

তারাগঞ্জ থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তারপরও ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সবকিছুই নজরে আছে আমার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম