বজ্রাঘাত থেকে বাঁচতে নিরোধক যন্ত্র চান বগুড়াবাসী
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পিএম
বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে বর্ষাকালে বজ্রাঘাতে অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। চরের বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটনায় কৃষকদের কাছে এটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
যদিও বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি এ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে দুটি বজ্র নিরোধক দণ্ড বা লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসিয়েছে। তাদের গবেষণা মতে স্থাপন করা বজ্র নিরোধক দণ্ড থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে গত এক বছরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাই বজ্রাঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে যমুনা নদীর প্রতিটি চারবাসী ও কৃষকরা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপনে সরকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ চাইছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনার মোট ৭১টি চরে দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। যমুনা ও বাঙালি নদীবেষ্টিত পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রতিবছর নদী ভাঙনে সর্বশান্ত চারবাসিরা এক চর থেকে অন্য চরে যেতে হয়। নদীর সঙ্গে লড়াই করে চলে তাদের জীবন-জীবিকা।
চরের সিংহভাগ মানুষ নিম্নবিত্ত, যারা কৃষিতেই নির্ভরশীল। চরে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি সবজি ও উচ্চফলনশীল মরিচসহ নানা জাতের ফসল। এখানে উৎপাদিত ফসল যায় সারা দেশে। কিন্তু ঘরবাড়ি ও বৃক্ষহীন বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারাচ্ছেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী ও পুরুষ।
এর সিংহভাগ কৃষক ও শ্রমিক। সরকারি হিসাবে গত চার বছরে বগুড়ায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪০ জন মানুষের। তাছাড়া বজ্রাঘাতে আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেকে। বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালে সরকার একে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় মৃত্যুরোধে একাধিক প্রকল্পও নেওয়া হয়।
এর মধ্যে একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বজ্র নিরোধক যন্ত্র বসানো। এর অংশ হিসেবে সারিয়াকান্দির নয়াপাড়া চরে গত বছর একটি বজ্র নিরোধক দন্ড বসিয়েছে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। আরেকটি বসানো হয়েছে, তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে।
৩০-৪০ ফুট লম্বা দণ্ডে তিন-চার ইঞ্চি জিআইপি পাইপ এবং তামার তার থাকে। দণ্ডের ওপরে একটি ডিভাইস বসানো থাকে। যাকে লাইটেনিং অ্যারেস্টার বলে। এর মূল কাজ নির্ধারিত ব্যাসের মধ্যে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নেওয়া। সারাক্ষণ সক্রিয় থাকে এই যন্ত্র। এতে করে মাঠে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন চাষীরা।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের আরাজি হরিশ্বর গ্রামের আবদুর রশিদ মন্ডল (৪০) কাজ করতে এসেছিলেন সারিয়াকান্দির কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের ডাকাতমারা চরে। গত ১৭ অক্টোবর মরিচের জমি নিড়ানি দেওয়ার তিনি বজ্রাঘাতে মারা যান। একই ঘটনায় ওই গ্রামের আশরাফুল ইসলাম (৪৫) ও বাবু মিয়া (৫১) আহত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী ডাকাতমারা চরের আয়েন উদ্দিন বলেন, চর এলাকায় কোন উঁচু গাছপালা ও ঘরবাড়ি না থাকায় প্রতি বছর চরের কৃষক এবং শ্রমিকরা এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে হাটশেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে বজ্রপাত নিরোধক দন্ড স্থাপনের জন্য সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তাই আমাদের চরবাসির দাবি নয়াপাড়ার মতো প্রতিটি চরে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড বসানো হোক।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির চর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড. আব্দুল মজিদ বলেন, বজ্রপাতে দেশের চরাঞ্চল এবং হাওর অঞ্চলে কৃষক-শ্রমিকের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেড়ে গেলেও আমাদের স্থাপিত লাইটেনিং অ্যারেস্টারের ব্যাসের মধ্যে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাই বজ্রাঘাতে কৃষক-শ্রমিকের প্রাণহানি ঠেকাতে চরাঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি কাজ করছে।