সওজের ‘পাতানো’ লটারিতে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ ‘ভাগবাটোয়ারা’
তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এবার সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ ভাগবাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে। ৯টি সড়ক সংস্কার কাজ পাতানো লটারির মাধ্যমে তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের পাইয়ে দেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এ কাজের লটারি হয়। ঠিকাদাররা এ টেন্ডার প্রক্রিয়াকে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করতে ‘হাসিখুশি লটারি’ করার অভিযোগ তুলেছেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ‘লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর যত অনিয়ম ও দুর্নীতি’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে-টেন্ডারে অনিয়ম ও নির্বাহী প্রকৌশলীর লাগামহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ঠিকাদার সালাহ উদ্দিন। সম্প্রতি তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগটি করেছেন। অবশ্য অভিযোগ থেকে বাঁচতে মঙ্গলবার লটারি আয়োজনে অভিযোগকারী সালাহ উদ্দিনের প্রতিষ্ঠানকে একটি কাজ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে সওজের ৭ জন ঠিকাদারের ভাষ্যমতে, ঠিকাদার আবেদ মুনছুরের সঙ্গে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামও কাজ করছেন। আর এই কাজগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুদ্রাক্ষিক গোলাম রাব্বানি করে দেন বলেও অভিযোগ।
২০১৫ সালে প্রথম নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে লক্ষ্মীপুরে আসেন জহিরুল ইসলাম। ২০১৮ সালের শেষ দিকে বদলি হয়ে যান সুনামগঞ্জে। এরপর ২০২২ সালের ১ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো জহিরুল লক্ষ্মীপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব নিয়ে আসেন। তখন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের হাত ধরেই তিনি এখানে আসেন। এরপর নয়ন এমপির ঈশারায় সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সাধারণ ঠিকাদার নয়, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের টেন্ডার পাইয়ে দিতে জহিরুল কাজ করছেন।
জানা গেছে, ৩ অক্টোবর জেলার ৯টি সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৫ অক্টোবর দরপত্র গ্রহণের শেষ দিন ছিল। ১৬ অক্টোবর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। একইদিন দুপুরে দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। তবে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে ২৯ অক্টোবর লটারি করা হয়েছে।
সওজের একটি সূত্র জানায়, কথিত লটারিতে মেসার্স সাহাব উদ্দিন, মেসার্স রাজু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলতাফ হোসেন অ্যান্ড অন্যান্য, মেসার্স সালাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, মেসার্স ফারাহ ট্রেডার্স, মেসার্স এমএ এন্টারপ্রাইজ, রুবেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেসার্স ইস্কান্দার ট্রেডার্স ও মেসার্স রিয়া অ্যান্ড ব্রাদার্স কাজ পেয়েছে। এরমধ্যে মেসার্স সাহাব উদ্দিন প্রতিষ্ঠানটি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবুর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজ বিভাগের দ্বিতীয় সারির এক কর্মকর্তা জানান, টেন্ডার কার্যক্রমে যত বেশি ঠিকাদার অংশগ্রহণ করবেন, সরকার ততো বেশি রাজস্ব পাবে। কিন্তু উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলী তার মতাদর্শের ঠিকাদারদেরকে কাজ দিতেই নামেমাত্র লটারি করেছেন। যারা কাজ পেয়েছে তাদের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রাখা হয়নি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, টেন্ডার ভাগবাটোয়ার সঙ্গে আমি ও আমার দলের কেউ জড়িত না। আমি সেখানে ছিলামও না। শুনেছি লটারির মাধ্যমে ঠিকাদাররা কাজ পায়। আমি একটি পেয়েছি।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি সব ঠিকাদারকেই লটারির জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ৮-১০ জন এসেছেন। তবে কে কে কাজ পেয়েছেন তাদেরকে আমি চিনি না।
বিএনপি নেতাদের খুশি করতে কাজ দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযোগকারী সালাহ উদ্দিনকে অফিসে আমার সামনে নিয়ে আসলে এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হবে।