Logo
Logo
×

সারাদেশ

সুদ দিতে না পারায় কেড়ে নেওয়া গরু ফিরে পেলেন মালিক

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩০ পিএম

সুদ দিতে না পারায় কেড়ে নেওয়া গরু ফিরে পেলেন মালিক

বগুড়ার ধুনটে সুদের টাকা দিতে না পারায় দাদন ব্যবসায়ী ও তাদের লোকজনের কেড়ে নেওয়া গরু ফিরে পেয়েছেন ঋণগ্রহীতা সুমির চন্দ্র শীল। অভিযোগ পেয়ে ধুনট থানা পুলিশ পাঁচ দিন পর বুধবার গরুটি উদ্ধার করে দিয়েছেন। আর গরুর মালিক ছয় মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

বিকালে ধুনট থানার এসআই মোহাম্মদ আলী এ তথ্য দিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সুমির চন্দ্র শীল বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের পীরহাটি গ্রামের তারাপদ শীলের ছেলে। তিনি আগে চাকরি করলেও গত তিন বছর ধরে বেকার। ছেলে কলেজে ও মেয়ে স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। চার সদস্যের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। বাড়ির পালন করা গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার চলে। সংসারের অভাব মেটাতে সুমির প্রায় দেড় বছর আগে ডিমের ব্যবসা করার উদ্যোগ নেন।

প্রতিবেশী বিমল চন্দ্রের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী সঞ্জয় কুমার মোহন্তের কাছে বার্ষিক ২৫ হাজার টাকা সুদে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। এ ব্যাপারে স্ট্যাম্পে দুই কিস্তিতে (ইরি ও আমন মৌসুম) ঋণ পরিশোধের শর্ত রাখা হয়। শর্তানুসারে ঋণ গ্রহণের ছয় মাস পর ১৩ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপর সংসারে অভাবের কারণে সুমির সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন।

দাদন ব্যবসায়ী সঞ্জয় কুমারের হিসাবে তিনি সুমিরের কাছে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা পাবেন। চাপের মুখে সুমির চন্দ্র গরুটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন। বিষয়টি জানতে পেরে সঞ্জয় কুমার মোহন্ত ও তার লোকজন গত ২৫ অক্টোবর প্রতিবেশী সুমির চন্দ্র শীলের বাড়িতে যান। এরপর পরিবারের আয়ের শেষ উৎস গরুটি নিয়ে যান। এর আগে বাধা দেওয়ায় তারা সুমির ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন।

এদিকে মারধর ও গরু নিয়ে যাওয়ায় সুমির চন্দ্র শীল ধুনট থানায় সঞ্জয় কুমার মোহন্তসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে দাদন ব্যবসায়ী সঞ্জয় কুমার মোহন্ত বলেন, শর্তানুসারে তিনি সুমিরের কাছে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা পান। তিনি দাবি করেন, সুমির গরু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন। সমঝোতার মাধ্যমে গরু বাড়িতে এনেছিলেন। জোরপূর্বক গরু আনা ও তাদের মারপিটের অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট।

সুমির চন্দ্র শীল বলেন, ডিমের ব্যবসা করার জন্য প্রতিবেশী দাদন ব্যবসায়ী সঞ্জয় কুমার মোহন্তের কাছে বার্ষিক ২৫ হাজার টাকা সুদে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আগামী মাঘ মাসে ঋণ নেওয়ার দুই বছর পূর্ণ হবে। ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে দুই কিস্তিতে ১৩ হাজার ও ১২ হাজার টাকা পরিশোধের কথা ছিল। তিনি ইতোমধ্যে সুদের ১৩ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন; কিন্তু সংসারে অভাব ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে গিয়ে সুদের ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন দাদন ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে তিনি গরু বিক্রি করে টাকা পরিশোধের উদ্যোগও নিয়েছিলেন; কিন্তু সঞ্জয় ও তার লোকজন গত ২৫ অক্টোবর বাড়িতে এসে দেড় লাখ টাকা মূল্যের গরু নিয়ে যান। বাধা দেওয়া তাদের মারধর করা হয়।

তিনি আরও জানান, পুলিশের মধ্যস্থতায় বুধবার গরু ফিরে পেয়েছি। তবে মারধরের বিচার পাইনি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ করতে চেয়েছি। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার থানায় স্ট্যাম্পে চুক্তি হবে। তবে সুদের টাকা বাদ দিয়ে ৭২ হাজার টাকা ও পরিশোধের সময় এক বছর হলে তার জন্য সুবিধা হতো।

ধুনট থানার এসআই মোহাম্মদ আলী জানান, বুধবার সমঝোতার মাধ্যমে সুমির চন্দ্র শীলকে গরুটি উদ্ধার করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সুদাসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন। বর্তমানে আর কোনো সমস্যা নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম