ডা. কাজেমের খুনিদের গ্রেফতার-শাস্তির দাবি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদের খুনিদের গ্রেফতার ও শান্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা ১১টায় রামেক হাসপাতাল কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডা. কাজেম নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তিনি উত্তরাঞ্চলের একজন স্বনামধন্য চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। রাজশাহীর পপুলার হাসপাতাল থেকে গত বছরের ২৯ অক্টোবর রাতে রোগী দেখা শেষ করে তিনি মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় রাস্তায় দুর্বৃত্তরা মাইক্রোবাসযোগে ডা. কাজেমের পিছু নেয়। বর্ণালী মোড় সংলগ্ন এলাকায় ডা. কাজেমের বহনকারী মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় মাইক্রোবাসটি। এর ফলে তিনি ফুটপাতের ওপর পড়ে যান। এ সময় খুনিরা অতি দ্রুত মাইক্রোবাস থেকে নেমে তার বুকে পরপর তিনটি ছুরিকাঘাত করে মাইক্রোবাসযোগে পালিয়ে যায়।
এরপর মোটরসাইকেলচালক শাহীন এবং পথচারীরা রক্তাক্ত অবস্থায় ডা. কাজেমকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরদিন ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন এবং পরবর্তীতে ফরেনসিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এটি পেশাদার খুনিদের হাতে একটি নিখুঁত খুন বলে উল্লেখ করা হয়। এ নৃশংস খুনের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করেন।
ডা. কাজেম হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারা দেশে টানা কয়েক দিন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ নৃশংস খুনের বিচার চেয়ে রাজপাড়া থানায় ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর রাতেই ডা. কাজেমের স্ত্রী ডা. ফারহানা ইয়াসমিন সোমা একটি খুনের মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, খুনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মামলার কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। রাজশাহীকে শান্তিরশহর বলা হয়। জানমালের নিরাপত্তার জন্য এ শহরে শত শত সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। যে স্থানে ডা. কাজেম খুন হয়েছেন সেখানেও সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল এবং আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এ খুনের ঘটনা তদন্ত করেছে; কিন্তু ফ্যাসিবাদীর দোসররা আসামি গ্রেফতারে কোন সহযোগিতা না করে বরং অজ্ঞাত কোন কারণে তার বিলম্ব ঘটিয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত এ নৃশংস খুন সম্পর্কে কোন অগ্রগতি বা এ বিষয়ে কোনো কিছু জানতে পারছি না। পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের বাবা যোগাযোগ করলে পিবিআই কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে জানাতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, এ খুনের সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছি। এ খুনের সঙ্গে কারা জড়িত তা আমরা জানতে চাই। তার স্ত্রী-সন্তানরাও জানতে চান। পরিবর্তিত রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে আমরা নিহত ডা. কাজেমের বাবা মা, স্ত্রী সন্তান এবং নিকটাত্মীয়সহ সর্বস্তরের চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তার খুনিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর কোনো কালক্ষেপণ না করে অতিদ্রুত এ নৃশংস খুনের সঙ্গে জড়িত খুনিচক্রকে গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দেখার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞাসহ চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।