রোবহানউদ্দিনে এইচপিভি টিকা নিয়ে ৬২ ছাত্রী অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি ৫২
ভোলা ও বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ জ্ঞানদা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা দেওয়ার পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অর্ধশতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ৫২ জনকে বোরহানউদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর ৫জনকে ভোলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অনুপম সরকার জানান, নার্ভাসনেস থেকে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়েছে। এই সমস্যাকে ডাক্তারি ভাষায় ম্যাস সাইকোলজিক্যাল ইলনেস বলা হয়। রেস্ট নিলে দুই ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। তার উপস্থিতিতে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় বলেও জানান তিনি। কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান খবর পেয়ে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থদের খোঁজ খবর নেন।
তিনি জানান, ৬২ ছাত্রী অসুস্থ হয়েছে। একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ভোলা থেকে এসে চিকিৎসা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে কি কারণে এমনটা হয়েছে তা তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। বিকাল সোয়া ৪টার মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাইহানুজ্জামান জানান, বেলা ১২টার দিকে ওই স্কুলে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির মেয়ে শিক্ষার্থীদের কয়েক ছাত্রী অসুস্থতাবোধ করলে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে ৫২ জন ভর্তি হয়েছে। ১০ জন দুপুর ৩টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যায়। ৪২ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
স্কুল প্রধান শিক্ষক মো. সোহেল হোসেন জানান, সকাল ১০টায় টিকা দেওয়া শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে একজন ছাত্রী অসুস্থ হয়। এরপর তাকে দেখে অন্য ছাত্রীরা একে একে অসুস্থ হতে থাকে। টিকা নেয়নি এমন ছাত্রীও অসুস্থ হয়েছে। তবে অনেক ছাত্রী বাড়ি থেকে না খেয়ে এসেছে। তারা বিষয়টি আগে জানায়নি। বিকালে গুরুতর তামান্নাসহ ৬ ছাত্রীকে ভোলায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, ছাত্রীরা সকালে না খেয়ে বাড়ি থেকে আসে। ওই অবস্থায় টিকা দেওয়ায়, অনেকের মাথা ঘুরে পড়ে যায়। অনেকে বমি করে দেয়।
এমন ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চড়াও হন। তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তৃষা মনি দে জানায়, টিকা দেয়ার কিছু পড়ে তার মাথাও ঘুরতে থাকে। তার বাবা গিয়ে দ্রুত তাকে এনে ডাবের পানি ও স্যালাইন খাওয়ায়। পড়ে বাড়ি চলে আসে।
অভিভাবক মানিক দে জানান, এই ধরনের টিকা দেওয়ার আগে অবশ্যই আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, এই টিকা নেয়ার জন্য আগে থেকে সব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে সাইকোলজিক্যাল ইলনেস যেকোনো কারণে হতে পারে। তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রী সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাদের সবাইকে সুস্থ করতে ডাক্তার ও নার্সরা কাজ করছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ওই স্কুলে ১৬২ জন টিকা নিয়েছিল। এর মধ্যে ৬২ জন অসুস্থতাবোধ করেন। অপরদিকে টিকা নেয়নি এমন ৫ জনও অসুস্থ হয়েছে। তাদেরও চিকিৎসার জন্য ভোলায় রেফার করা হয়।