সুগন্ধা হাউজিংয়ের মালিকের বিরুদ্ধে জমি দখল-আত্মসাতের অভিযোগ
জাভেদ মোস্তফা, যুগান্তর প্রতিবেদন (ঢাকা উত্তর)
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম
সাভারের বামনি খালসহ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সরকারি খাসজমিতে অবৈধ দখল এবং খালের জমিতে বালি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। সাভারের হেমায়েতপুর সুগন্ধা হাউজিং প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জিতুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
দখলবাজি ও আশপাশের জমির মালিকদের জমি আত্মসাতের জন্য তিনি এলাকার মানুষদের হয়রানি করছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। চিহ্নিত ভূমিদস্যু হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সাভারজুড়ে। বর্তমানে তিনি ভোল পাল্টে হচ্ছেন বিএনপির সমর্থক। একাধিক বিএনপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠেছে।
গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে জমি দখল ও জমির মালিক হয়রানির অনেক অভিযোগ প্রকাশ হয়েছে। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানায়ও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাউজিংয়ের পাশের জমির দখল নিয়ে বিরোধ রয়েছে জমজম হাউজিং ও এসএ হাউজিংয়ের সঙ্গেও। হাউজিং সংলগ্ন চান্দুলিয়া ও বিলামালিয়া সরকারি খাসজমি দখলে নিয়ে ভরাট শুরু করলে তৎকালীন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পক্ষ থেকে জমিতে সেখানে সাইনবোর্ড লাগালেও জমি ভরাটের কার্যক্রম এখনো বন্ধ হয়নি।
আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. হারুন উর রশিদ, এবং স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের সহযোগিতা নিয়ে দখলবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। তাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওই হাউজিংয়ে।
থানা পুলিশ ও খাসজমি দখলে তাদের সহযোগিতা নিয়ে হাউজিংয়ের ভেতর জমির প্লট দেওয়াসহ বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। দেশ বিদেশে তাদের পরিবারের শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে বিষয়টি দুদকের নজরে আনার জন্য স্থানীয়ভাবে দুনীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আছে বলেও ভুক্তভোগীরা জানান।
২০১৯ সালে সুগন্ধা হাউজিং প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট এবং আলমনগরের স্বত্বাধিকারী মো. আলম চানের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম সুগন্ধা হাউজিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এ সময় আলমের অন্য দুই ছেলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর তার বিধবা আপন বড় বোন হোসনে আরার সম্পত্তিও জবর দখল করেছে। যদিও তার বোন এই প্রতিবেদককে জানান, এটা পারিবারিকভাবে মীমাংসা হয়ে যাবে বলে জাহাঙ্গীর তাকে জানিয়েছেন।
এছাড়া রংপুরের এক নাম করা ব্যবসায়ীর আড়াই কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বেঙ্গল সোমবার সকালে এই প্রতিবেদককে জানান, বিগত ১৯৯৭ সালে এই হাউজিংয়ের একটি সোয়া ৮ শতাংশ জমি যা ওই হাউজিং এর নকশায় ব্লক এ-এর ১০ নম্বর প্লটটি জাহাঙ্গীরের পিতা মো. আলম চান সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে বিক্রয় করেন। কিন্তু ব্যবসায়িক কারণে উনি ব্যস্ত থাকায় ২০১৭ সালে জানতে পারেন তার সম্পত্তি-প্লট দখল হয়ে গেছে। খবর নিয়ে জানতে পারেন জাহাঙ্গীর সেই জমি দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রয় করছেন।
এ নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আবুল কালামসহ কয়েকবার দেন-দরবার হলেও তিনি জমির মালিকানা ফিরে পাননি।
আবুল কালাম যুগান্তরকে জানান, জাহাঙ্গীর তার জমি দখল করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই এ বিষয় মীমাংসা করা হবে। তবে ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেনদরবার হলেও এ যাবত আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। কয়েক বছর আগে মোস্তফা কামাল বেঙ্গলকে কিছু টাকার বিনিময়ে জমিটি ফেরত দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। মোস্তফা কামাল বলেন- আমার আড়াই কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ৭০-৮০ লাখ টাকার বিনিময়ে জাহাঙ্গীর নিতে চান; যা কোনোভাবেই সম্ভব না।
এ ব্যাপারে জানতে জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি প্রথমে নাস্তার কথা বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে আবার ফোন দিলে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার ফ্যামিলির সবার সঙ্গে কথা না বলে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না।
স্থানীয় জমজম হাউজিংয়ের মালিক হাজী নুর মোহাম্মদ দৈনিক যুগান্তরকে জানান, সুগন্ধার মালিক জাহাঙ্গীর সরকারি খাল দখল করে কয়েকটি ভবন নির্মাণ করেছেন। তৎকালীন ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার বিষয়টি দেখে কাজ বন্ধ রাখার কথা বললেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।
স্থানীয় মাওলানা মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে জানান, আমরা সুগন্ধা হাউজিংয়ের পাশে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ শতাংশ জমি সাব কাবলা দলিলের মাধ্যমে ২৫ জন ক্রয়ে সূত্রে মালিক। বর্তমান শেষ জরিপেও তাদের নামে বিআরএস রেকর্ড সঠিকভাবে হয়েছে। হাল খাজনাও দেওয়া আছে। তথাপি ওই জমিতে আমরা বাউন্ডারি ওয়াল বা বাড়ি ঘর নির্মাণের কাজ করতে পারছি না।
তাদের কেয়ারটেকার বাহার জানান, বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ করতেই জাহাঙ্গীরের লোকজন বাধা দেয় ও রাতের আঁধারে সব ভেঙে ফেলে।
জমির মালিকরা জানান, এই ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করে নামমাত্র দামে জাহাঙ্গীর আমাদের সম্পত্তি জোর করে নিতে চায়। তারা সাভার মডেল থানায় বেশ কিছু অভিযোগ দিলেও প্রশাসনিকভাবে আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি না।
সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল নুর সোমবার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, সুগন্ধা হাউজিংয়ের মালিক জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বর্তমানে চান্দুলিয়া ও বিলামালিয়া খাল দখলের কোনো অভিযোগ নেই। বিলামালিয়া খালের কিছু খাসজমি অংশ সুগন্ধা হাউজিংয়ের দখলে ছিল, তা আমরা ২০২২-২৩ সালে উদ্ধার করে সীমানায় সাইনবোর্ড ও গাছ লাগিয়ে দিয়েছি।
বর্তমানে সাইনবোর্ড ও গাছ না থাকার বিষয় তিনি বলেন, ভারি বৃষ্টিতে গাছগুলো পড়ে গেছে।
আর সাইন বোর্ড সরিয়ে আবার মাটি ভরাট করছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা রাসেল নুর বলেন, এটা আমিনবাজার ভূমি অফিসের নিয়ন্ত্রণে তাই নতুন ভূমি কর্মকর্তা যোগদান করার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।