সাটুরিয়ায় বিভিন্ন সেবা পেতে হয়রানি, নিজেরাই লিখছেন সনদ

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৬ এএম

জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও চেয়ারম্যানের সনদপত্রসহ বিভিন্ন সেবা পেতে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে দিঘলীয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে। একটি স্বাক্ষরের জন্য আসা যাওয়ার পথে খরচ গুনতে হয় প্রায় হাজার টাকা।
প্রশাসনের যিনি দায়িত্বে আছেন সাধারণ জনগণ দেখা করতে গেলে মিলছে না অনুমতি। নাগরিকদের সেবা নিয়ে চরম হতাশায় ইউপি সদস্যরাও। প্রাশসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর একদিনও বসেননি ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা।
অনুসন্ধানে যায়, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মো. ফরমান আলী। বলেন, তিনি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য জন্ম নিবন্ধনের জন্য যান দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকার কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকে কাছে ১৫ দিন ঘুরে তার অফিসের সামনে গোল ঘরে বসেছিলেন কয়েক দিন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদ। এতে কয়েক দিনের যাতায়াত করতে খরচ হয়েছে এক হাজার পাঁচশ টাকা।
দিঘলীয়া দেলুয়া গ্রামের মো. মোসা ইব্রাহিম তার জন্ম নিবন্ধনের জন্য তিন দিন ধরে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশানর ভূমি কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরছেন। মোসা বলেন, বেলা ২টার পর স্বাক্ষর করেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।তিনি বলেন, দিঘলীয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ জন-প্রতিনিধিদের সনদ পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রোববার মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা দিঘলীয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ভিড় করেছিল কয়েকজন যুবক। তারা জানান, আগামী ১০ নভেম্বর মানিকগঞ্জে পুলিশ লাইনে লোক নিয়োগ হবে। দেখা গেল পরিষদের বারান্দায় একটি সনদপত্রের বই রাখা আছে। স্থানীয় বেকার যুবক আকাশ হোসেন, জাকির হোসেন ও আলামিন নিজেরাই লিখে নিচ্ছেন যার যার সনদ। ওই সনদ নিয়ে ইউপি সদস্যর স্বাক্ষর করে নিয়ে যায় প্রশাসকের কাছে। কিন্তু অনেকে এত কার্যক্রম শেষ করে, ১০ কিলোমিটরা পথ অতিক্রম করে বেলা ২টার পর প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছলে তাদের সনদে স্বাক্ষর করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা মো. তানভীর আহম্মেদ।
যুবকরা অভিযোগ করে বলেন, দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ের দুরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিনশ টাকা। একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কয়েক দিন। বেলা ১১টার পর তিনি অফিসে বসেন। বসেই অফিসিয়াল নথিপত্রের কাজ করেন। আর আমাদের ভূমি অফিসের গোল ঘরে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বেলা ২টা বাজলেই তিনি আর স্বাক্ষর করবে না বলে অফিস পিয়ন জানিয়ে দেয়।
এরপর সাটুরিয়া উপজেলা ইউএনও শান্তা রহমান সাটুরিয়া সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা মো. তানভীর আহম্মেদকে দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেন।
দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর একদিনের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক পরিষদে বসেননি।
এ বিষয়ে দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মো. তানভীর আহম্মেদের কাছে নাগরিক হয়রানির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে না। বলেন, যে নাগরিকের প্রয়োজন হবে তিনি তার প্রয়োজনেই এসে স্বাক্ষর করে নিয়ে যাবেন। বেলা ২টার পর স্বাক্ষর না করা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তিনি তার নিজের আইনে স্বাক্ষর করেন না।