Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভিডিও কলে প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহত্যা, চাইলেন একই কবরস্থানে দাফন

Icon

লালমাই (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম

ভিডিও কলে প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহত্যা, চাইলেন একই কবরস্থানে দাফন

কুমিল্লার লালমাইয়ে ভিডিও কলে এসে প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে উপজেলার বেতুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

একই কবরস্থানে দাফন চেয়ে চিরকুট লিখে ভিডিও কলে স্বামীর বাড়িতে প্রেমিকা খাদিজা আক্তার উর্মি (১৬) ও ওমান প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন (২৫) একসঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

মৃত খাদিজা আক্তার উর্মি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানাধীন মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে।

এদিকে মৃত ওমান প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে। ১৪ অক্টোবর লালমাই উপজেলার বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রংমিস্ত্রি আরিফুর রহমানের সঙ্গে খাদিজা আক্তার উর্মির বিয়ে হয়।

উর্মির লাশের পাশে থাকা চিরকুটে লিখেছে- ‘চাইছিলাম দুজনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না। এটা সত্যি ও আমার প্রথম সাথী। ওরে আমি বিয়ে করছি; কিন্তু ওর জায়গা আমি অন্য কাউরে দিতে পারি নাই, পারবও না। তোমরা সুখে থেকো। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা ও ভাই-বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু একসঙ্গে থাকতে দেও নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। এক দিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে। সেই চাওয়াটা যেন পূরণ করেন আপনারা।’

এদিকে মৃত প্রবাসী সাফায়েত মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখেছেন- ‘শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সব কিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী; সব কিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে আর ভিডিও করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপশনে আর গ্যালারিতে সব আছে। গ্যালারিতে আমার আটটা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপশনে ঢুকবেন, ইমোতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনো দিন ক্ষমা করব না।’

উর্মির মা নুরুন্নাহার বেগম জানান, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে সাফায়েত নামের একজন প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। ১৪ অক্টোবর মেয়ের সম্মতি নিয়েই তাকে বিয়ে দেই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে উর্মি ও সাফায়েত ভিডিও কলে এসে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী সাফায়েত ছেলেটাই আমার মেয়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।’

মৃত সাফায়েতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, ‘এক বছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আমার ছেলের সঙ্গে উর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে আমার ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।’

লালমাই থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিয়ের ১৩তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার রাত অনুমান ১১টায় নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নববধূর ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম