আবু সাঈদ হত্যায় বেরোবির তদন্ত রিপোর্ট সোমবার
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০১ পিএম
আগামী ২৮ অক্টোবর সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আবু সাঈদ হত্যার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) উপাচার্য প্রফেসর মো. শওকাত আলী। এটি তাদের গঠিত তদন্ত কমিটির নিজস্ব তদন্ত রিপোর্ট। এটি এখন উপাচার্যের দপ্তরে সংরক্ষিত আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এমন অভিযোগ রয়েছে পুলিশসহ ওই আন্দোলনবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত করছে রংপুর পিবিআই।
আবু সাঈদ নিহত হওয়ার সময় পুলিশসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষক, ৪ কর্মকর্তা এবং ৫ কর্মচারীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেদিন তাদের হামলায় আহত হন সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। আবু সাঈদ নিহতের খবর শুনে স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে সেদিনের আন্দোলন।
অভিযোগ রয়েছে, এ হামলায় পুলিশের সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষক। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিয়ার রহমান এবং লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল।
হামলাকারীর তালিকায় আরও চার কর্মকর্তা রয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তারা হলেন- রাফিউল হাসান রাসেল, তৌহিদুল জনি, হাফিজুর রহমান তুফান এবং মনিরুজ্জামান পলাশ।
এছাড়া কর্মচারী নুরুন্নবী, আশিকুন্নাহার টুকটুকি, সুবহান মোক্তার, আমির হোসেন আমু জড়িত- এমন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা ৬৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসন বরাবর জমা দিয়েছেন। জানা যায়, আবু সাঈদ হত্যা এবং অন্যান্য আহতের ঘটনায় দুইবার তদন্ত কমিটি গঠন করলেও প্রথম কমিটি তদন্ত সম্পন্ন না করেই পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তী দ্বিতীয় দফা গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন করতে বললেও মাস পেরুলেও এখনো তা প্রকাশিত হয়নি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ছাত্রত্ব বাতিল ও নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো আবু সাঈদ হত্যার আড়াই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই-দুবার তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখনো মেলেনি কোনো তদন্ত রিপোর্ট।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, প্রথম তদন্ত কমিটির সময়ে তিনি ছিলেন না। তবে তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর অপরাধীদের শনাক্ত করতে দ্বিতীয় দফা তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিদের কাছে ওই কমিটি তথ্য চেয়েছেন। কিন্তু তারা অপরাধীদের সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সাক্ষাৎকার দিতে বাড়তি সময় চেয়ে নিয়েছিল। তাই সাত কর্ম দিবসের বেশি সময় লেগেছে। এখানে তদন্ত কমিটির কোনো গাফিলতি ছিল না।
তিনি বলেন, গত সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হবে। তাই আমরা তদন্ত কমিটি ও রিপোর্ট নিয়ে কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করছি। আগামী ২৮ তারিখে সিন্ডিকেট সভা আছে। এ সময় সাংবাদিক ডেকে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে।