প্রতীকী ছবি
চট্টগ্রামে গত প্রায় ৩ মাসে চাঞ্চল্যকর চারটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের অস্থিরতার জেরে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ড কারা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। থানা পুলিশের আন্তরিকতার অভাবেই খুনিদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে-সিএমপির ২৩ পরিদর্শককে একযোগে বদলি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। আবু হাসান মুহম্মদ তারিক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পরিদর্শকদের বদলি করা হয়।
তাদের সবাইকে সিএমপি থেকে বিভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। সিএমপি সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও সিএমপিতে গতি আনতেই বদলির এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টার ও এভারকেয়ার হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা নিহত হন। মাসুদ হাটহাজারী উপজেলার ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার মৃত মো. ইসহাকের ছেলে। আনিস একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ রফিকের ছেলে। আনিস হাটহাজারী উপজেলার ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনার পর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি ও হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা হলেও আসামিদের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
১১ অক্টোবর বায়েজিদ বোস্তামী থানার শান্তি নগর এলাকায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মীকে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ আহত ইমনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তিনি মারা যান। ইমন হত্যার ঘটনায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দল নেতাসহ ২৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় রাকিব হোসেন ছাড়া আর কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সোমবার নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে ছাত্রলীগ কর্মী আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে (২৬) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাহসিনের বাবা বাদী হয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে-সাজ্জাদের সহযোগী মো. হাসান, মোহাম্মদ, খোরশেদ ওরফে খালাতো ভাই খোরশেদ ও মো. হেলাল উদ্দিন। খুনের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নগর পুলিশের কর্মকাণ্ডে কিছুটা শিথিলতা দেখা দেয়। পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিলেও এখনো গতিশীল হয়নি অনেক থানা। আর এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এ কারণে প্রায়ই সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে সিএমপির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পুলিশ বাহিনী ঢেলে সাজাতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সিএমপির ২৩ পরিদর্শককে একযোগে বদলি করা হয়েছে। সিএমপির পরিদর্শক জামাল উদ্দিন, এম সাকের আহমেদ, আবদুল রহিম ও মোহাম্মদ জহির উদ্দিনকে ঢাকা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। পরিদর্শক মেহেদী হাসান, শহিদুল রহমান, সাখাওয়াত হোসেন ও আল মামুনকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে পরিদর্শক সৈয়দ মঈনুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ও নূর ইসলামকে। একইভাবে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে পরিদর্শক রেজাউল করিম, আতিকুর রহমান ও এসএম শাকিল হাসানকে। সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে পরিদর্শক মোক্তার হোসেন, মনিবুর রহমান ও মো. ছবেদ আলীকে। ময়মনসিংহ রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন মজুমদার, রুহুল আমিন ও সাজেদ কামালকে। বরিশাল রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম ও এআইএম তৌহিদুল করিমকে। এছাড়া পুলিশ পরিদর্শক সুজন কুমার দেকে বদলি করা হয়েছে রেলওয়ে রেঞ্জে।