Logo
Logo
×

সারাদেশ

আ.লীগ নেতা প্রধান শিক্ষকের দাপট, একবছর ধরে বেতন পান না কর্মচারী

Icon

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫২ পিএম

আ.লীগ নেতা প্রধান শিক্ষকের দাপট, একবছর ধরে বেতন পান না কর্মচারী

আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বাবলু মিয়া নামে ৪র্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির হুমকিসহ দীর্ঘ এক বছর ধরে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা বন্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। 

বিষয়টি আদালতে গড়ানোর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ কর্মচারী বাবলু মিয়ার। দীর্ঘ এক বছর ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি। 

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন পতিত (আওয়ামী লীগ) সরকারের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার কথাই চূড়ান্ত হতো বলে দাবি স্থানীয়দের। আব্দুল মতিন যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, একই সঙ্গে তিনি যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন।

কাগজপত্র ঘেঁটে ও অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে বিদ্যালয় সংলগ্ন শ্রীফলগাতি গ্রামের বাসিন্দা বাবলু মিয়াকে যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনসহ তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছরেই এমপিওভুক্ত হন তিনি। চাকরির বয়স ১০ বছর পূর্ণ হলে পান উচ্চতর স্কেলও। ২০২০ সালে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন ওই কর্মচারীকে একজন সৎ, দক্ষ, কর্মঠ ও যোগ্য হিসেবে দেন ‘গুড সার্টিফিকেট’ও। 

তবে ২০২১ সালের পরিপত্রে বাবলু মিয়ার নিয়োগকৃত ‘পিয়ন’-এর কোনো পদ না থাকায় ভোল পাল্টান প্রধান শিক্ষক। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেই শুরু করেন কূটচাল। পরিপত্র অনুযায়ী, বাবলু মিয়ার চাকরি নাই বলে তাকে সাফ জানিয়ে দেন। 

এদিকে ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে ‘পিয়ন’ পদটির নাম শ্রুতিমধুর করতে তা পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে সরকার। এই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পিয়ন পদে কর্মরত বাবলু মিয়াকে অফিস সহায়ক পদ না দিয়ে উলটো ওই পদে লোক নিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক। 

এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন পিয়ন বাবলু মিয়া। তবে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ ভুক্তভোগির। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুল হাসান বলেন, আদালতে মামলা করার আগে বাবলু মিয়া উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন কিনা, তা আমার জানা নেই। তার বিষয়টি মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে বলেও জানান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।

তবে বাবলু মিয়ার সরবরাহ করা ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল উপজেলা ম্যাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে গৃহীত সিলমোহরযুক্ত একটি লিখিত অভিযোগের অনুলিপি এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।  

নিজের চাকরি ও পদ রক্ষায় অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হন বাবলু মিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রেখেছেন তিনি। পর পর দুটি মামলায় আদালত বাবলু মিয়ার পক্ষে রায় দেন এবং পিয়ন/অফিস সহায়ক পদে কর্ম সম্পাদনের নিদের্শসহ সমস্ত বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

তবে আদালতের নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে ওই পদে (অফিস সহায়ক) লোক নিয়োগ দেন তিনি। 

এদিকে দীর্ঘ এক বছর ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগি বাবলু মিয়া।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আমার পদে অন্য লোক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রথমে আমি উপজেলা মাধ্যমিক ও ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। এতে কোনো ফল পাই নাই। অভিযোগের বিষয়ে কেউ কোনো দিন তদন্তও করে নাই। পরে বাধ্য হয়ে আদালতে যাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই আমার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, তাই তার কথাই নাকি চূড়ান্ত। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।’ 

অভিযোগের বিষয়ে যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, বাবলু মিয়াকে আমি নিয়োগ দিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষের আদেশে তার (বাবলু মিয়া) বেতন-ভাতা বন্ধ রেখেছি। 

বাবলু মিয়ার সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নাই বলেও জানান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম