বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চাকরি প্রবিধানমালা ও সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ভঙ্গ করে কৃষি ব্যাংকের নড়াইলের সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। আর শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক কমিটিতে পদেও আছেন তিনি; নিয়মিত অংশ নেন দলের কর্মসূচিতেও।
সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদমর্যাদার বিকেবি নড়াইল অঞ্চলের সাবেক আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাস দীর্ঘদিন ব্যাংকিং পেশার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিয়মিত অংশ নেন দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
এমনকি ওই রাজনৈতিক সংগঠনের নামে কৃষি ব্যাংকের নড়াইল শাখা থেকে নিয়মিতভাবে অনলাইনে মোটা অঙ্কের চাঁদাও প্রদান করেছেন প্রতাপ কুমার বিশ্বাস। তখনকার ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটির পদে থেকে সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে কৃষি ব্যাংকের সর্বোচ্চ নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন তারই অধীনস্থ কর্মচারী ওমর ফারুক বিশ্বাস।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নড়াইল অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বিশ্বাস স্বাক্ষরিত লিখিত একটি অভিযোগ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২০২১ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার ৩৫ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. এসএম মালেক। বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত ওই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডলীর তিন নম্বর ক্রমিকের পদে নড়াইল অঞ্চলের সাবেক আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের নাম রয়েছে।
এ নিয়ে তখন থেকেই একজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে সরাসরি রাজনৈতিক কমিটিতে পদ দেওয়া নিয়ে ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে সর্বত্রই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তিনি কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালনসহ উক্ত সংগঠনের খুলনা মহানগর শাখার অফিসে নিয়মিত যাতায়াত এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে ব্যাংক বহির্ভূত কর্মকাণ্ড সংঘটনের মাধ্যমে ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।
এমনকি গত ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর থেকে প্রতাপ কুমার বিশ্বাস নড়াইলে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনকালে দেখা যায়, তিনি নড়াইল শাখা হতে নিয়মিতই অনলাইনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার কমিটিতে নিজ নামে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করেছেন। লিখিত অভিযোগপত্রের সঙ্গে এ সংক্রান্ত অনলাইন জমা স্লিপ ও একটি হিসাব বিবরণীসহ প্রমাণক কপিও সংযুক্ত করেছেন অভিযোগকারী।
অথচ বিদ্যমান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালায় বলা আছে, কোনো কর্মচারী-কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন না, উহার সাহায্যার্থে চাঁদা দান বা অন্য কোনো উপায়ে উহার সহায়তা করবেন না এবং ব্যাংক বা রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে নিজেকে জড়িত করবেন না।
অথচ সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ভঙ্গ করে ওই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল তবিয়তে আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিকেবি নড়াইল অঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রতাপ শুধু রাজনৈতিক পদে ছিলেন এমন নয়, দলীয় কর্মসূচিতেই নিয়মিত অংশ নেন, সভায় বক্তব্য রেখেছেন এবং চাঁদাও প্রদান করেন।
আরএম প্রতাপ বিশ্বাসের কর্মকালীন নড়াইল আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতাপ বিশ্বাস দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে তার (প্রতাপের) সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি মূলত আমার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে সংগঠনের নামে খুলনার নিউমার্কেট শাখায় পরিচালিত সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে নিয়মিত চাঁদা পাঠাতেন।
এদিকে সম্প্রতি বিকেবি নড়াইলের সাবেক আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলির আদেশে সিলেট বিভাগীয় নিরীক্ষা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের নড়াইল অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) প্রতাপ কুমার বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না বলে এড়িয়ে যান তিনি।
একই প্রসঙ্গে বিকেবি নড়াইল অঞ্চলের বর্তমান আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) মো. বদরুল হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হয়ে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।