ট্রাফিক পরিদর্শক-স্ত্রীর ৬ কোটি টাকার বাড়ির তালিকা সম্পন্ন দুদকের
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৪ পিএম
ফরিদপুরে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) তুহিন লস্কর ও তার স্ত্রী জামিলা পারভীনের নামে থাকা ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়ির বর্ণনামূলক তালিকা (ইনভেন্টরি) সম্পন্ন করেছে দুদক গোপালগঞ্জ। সোমবার দুপুরে দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জিয়া হায়দার রোববার ট্রাফিক পরিদর্শক ও তার স্ত্রীর নামে গোপালগঞ্জের ৬ তলা বাড়ি জব্দ করে দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের আদেশ দেন।
ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বেলা ১১টায় দুদক গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল গোপালগঞ্জ পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় নির্মিত ওই বাড়িটি সরেজমিন পরিদর্শন ও বর্ণনামূলক তালিকা ( ইনভেন্টরি) প্রস্তুত করেন।
উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সাড়ে পাঁচতলার বাড়িটি পরিদর্শন করে দেখা যায় সেখানে ১১টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি ইউনিটে ভাড়াটিয়া বসবাস করছে। ভবনের দ্বিতীয়তলায় নিজেদের বসবাস করার জন্য দুইটি ইউনিট একত্র করে বড় একটি ইউনিট করা হয়েছে। নিচতলায় সাতটি বৈদ্যুতিক মিটার ও সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। বাড়িটির উপর তলায় একটি চিলেকোঠা রয়েছে।
তুহিন লস্কর গোপালগঞ্জে মুকসুদপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান লস্করের ছেলে। ১০ বছর যাবত ফরিদপুরে ট্রাফিক পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে প্রেষণে রংপুরে আছেন। তার স্ত্রী জামিলা পারভীন একজন গৃহিণী।
তুহিন লস্কর ও তার স্ত্রীর নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে দুদকের ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকন অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের নামে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও ঢাকায় স্থাবর-অস্থাবরসহ প্রায় চার কোটি টাকা সম্পত্তির সন্ধান পান। পরে আদালতের আদেশে ৮ সেপ্টেম্বর ওই সম্পদ জব্দ করা হয়। পাশাপাশি তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়। এরপর দুদক বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের নামে আরও প্রায় ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পান। আদালতে ওই সম্পদ জব্দের আবেদন করলে আদালত সেগুলো জব্দের আদেশ দেন। পাশাপাশি জব্দ করা সব সম্পদ তদারকির জন্য রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেন।
জব্দ করা সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঢাকার মিরপুরে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জ পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় প্রায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের ছয়তলা ভবন, খুলনার হাউজিং এস্টেট এলাকার গোয়ালপাড়া মৌজায় প্রায় ২ কাঠা জমিতে পাঁচতলা বাড়ি, গোয়ালপাড়া মৌজায় ১.৮ কাঠা জমি, ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মৌজায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, শহরের হাবেলি গোপালপুর মৌজায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই মৌজায় শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ জমি, গোপালগঞ্জ সদরের খাটারা মৌজায় ১৮ শতাংশ জমি।
এর বাইরে তুহিন ও জামিলার ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৬ লাখ ১৭ হাজার ২৯১ টাকাসহ ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। অবৈধ উপায়ে এসব সম্পদ অর্জন করা হয়েছে বলে দাবি দুদকের।