২০ শর্তের সংসার, স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৪ পিএম
২০ শর্তে স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করার আশ্বাস দিয়েছেন তার স্বামী ফিরোজ। তা না হলে তার সঙ্গে আর সংসার নয়। বিয়ে করা বৌকে এই ২০ দফা লিখিত শর্ত দিয়েছেন স্বামী ফিরোজ মিয়া।
আজব এ ঘটনাটি মানতে রাজি নয় স্ত্রীসহ তার বাপের বাড়ির লোকজন। তাই শর্ত না মেনে স্বামীর সংসার করার দাবি আদায় করতে গাইবান্ধায় আদালতের আশ্রয় নিতে আসেন সন্তানসহ স্ত্রী জেমি আকতার।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন। তার মেয়ে জেমি আকতারের সঙ্গে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল বিয়ে হয় পাশের গ্রামের ফিরোজ মিয়ার সঙ্গে। তার পিতার নাম দুলু মিয়া। বিয়ের পর থেকে দুজনের সংসার ভালোই চলছিল।
এর মধ্যে তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম হয়। পুত্রসন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। স্ত্রী জেমিকে তার ননদ ও শাশুড়িরা বিভিন্ন সন্দেহ করতে থাকেন। সন্দেহের প্রভাব পড়ে স্বামী ফিরোজ মিয়ার ওপর। তারপর শুরু হয় মানসিক দ্বন্দ্ব। কথায় কথায় স্ত্রীকে মারধর করা শুরু করে। তারপর তাকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয় তার হাত থেকে। এভাবে তার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন।
এসবের প্রতিবাদ করলে জেমি আকতারের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এসব ঘটনার কথা জেমি তার পিতামাতার কাছে জানালে তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। সালিশ বসে কয়েকবার কিন্তু সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পায়নি। শেষ পর্যন্ত স্বামী ফিরোজ স্ত্রীর উপর ২০টি শর্ত জুড়ে দেন।
শর্তে বলা হয়- স্বামীর দুলাভাইকে গার্জিয়ান হিসেবে মানতে হবে, মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। শ্বশুর-শাশুড়ির অনুমতি ছাড়া বাহিরে যাওয়া যাবে না। সংসারের যাবতীয় কাজ স্ত্রী জেমিকে করতে হবে এবং রান্না করে শাশুড়িকে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিতে হবে। এসব শর্ত না মানলে যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য স্ত্রী জেমি নিজেই দায়ী থাকবেন- এরকম ২০টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।
স্বামী ফিরোজের এমন সব জুড়ে দেওয়া শর্তে স্ত্রী জেমি আখতার ক্ষুব্ধ হন। তিনি সংসার করতে রাজি কিন্তু শর্ত বাদ দিয়ে। জেমি আকতার জানান, এ বিষয়ে নিজেদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। না হলে এমন শর্ত একজন নারীর জন্য অসম্মানজনক। নারীর জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তাই শর্তবাজ স্বামী ফিরোজের শর্তের প্রতিবাদ জানাতে ও জেমি তার সংসারে স্ত্রী হিসেবে নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে স্বজনদের নিয়ে গাইবান্ধায় আদালতে মামলা করতে আসেন স্বামীর বিরুদ্ধে।
জেমির পিতা জয়নাল আবেদিন জানান, এত শর্ত দিলে কি আর সংসার করা যায়? সংসার তো নিজেদের বিষয়; কিন্তু আমার মেয়েটাকে শর্ত জুড়ে দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা এ অমানবিক ঘটনার জন্য জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি গাইবান্ধায়। স্ত্রী জেমি আকতার বাদী হয়ে গাইবান্ধার নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আদালতে।
তার দাবির প্রতি সমর্থন ও আইনের প্রতি সমর্থন থাকতে হবে বলে জানান নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমীন শিল্পী।
গাইবান্ধা জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, শর্ত দিয়ে সংসার করার ঘোষণা দেওয়া নারীর প্রতি অবমাননা করা। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে শর্ত দেওয়া স্বামীকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার।