সমেস ডাক্তারের মৃত্যুতে এতিমদের নিয়ে বেকায়দায় স্ত্রী-সন্তানরা
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
রাজশাহীর বাঘায় এতিমখানার পরিচালক ও সাদা মনের মানুষ সামসুদ্দিন সরকার সমেস ডাক্তারের মৃত্যুতে বেকায়দায় পড়েছেন স্ত্রী ও সন্তানরা। এতিমখানা চালাতে গিয়ে চাল, ডাল, সবজির বিভিন্ন দোকানে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। একদিকে এতিম অন্যদিকে দোকানে বাকি নিয়ে পড়েছেন মহা বেকায়দায়।
জানা গেছে, গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনের পরিচালক সাদা মনের মানুষ সামসুদ্দিন সরকার সমেস ডাক্তারের ১২ অক্টোবর দুপুরে নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছেন।
তিনি ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর গড়গড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি সরেরহাট গ্রামে চলে আসনে। তিনি ১৯৬৪ সালে দাদপুর-গড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে আব্দুলপুর কলেজ থেকে ১৯৭২-৭৩ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পাশ করেন।
বাঘা শাহদৌলা ডিগ্রি কলেজে বিএ ভর্তি হয়েও অর্থের অভাবে লেখাপড়া আর হয়নি। এরপর একই গ্রামের মেহেরুন্নেছার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে যুদ্ধকালীন অনেক শিশুসন্তান বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যায় এবং অসহায় অবস্থায় ঘুরতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। এতিম শিশুদের কিভাবে প্রতিপালন করা যায়, এই চিন্তা তার মনে দানা বাঁধতে থাকে।
১৯৮৪ সালে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিতার কাছে থেকে পাওয়া নিজের জমি বিক্রি করে একটি এতিমখানা স্থাপন করেন। তার নাম রাখা হয় সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন। পরে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকেতন রাখা হয়েছে। এটি পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের জমির পাশাপাশি স্ত্রীর ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করতে হয়। এখানে ২৫০ জন ছেলেমেয়ে ও বৃদ্ধ রয়েছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে বেকায়দায় পড়লে ১৯৮৩-৮৪ সালে কারিতাস এনজিও পাশে দাঁড়ায়।
এ অবস্থা দেখে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইউনিলিভার একদিনের কর্মশালা করেন। ২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাদা মনের মানুষ হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে ১ লাখ টাকা পুরস্কার, স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট, শেরওয়ানি, সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে পান্নাপাড়া হাইস্কুল, বাঘা সমিতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নির্মোহ মানব সেবক, ২০০৮ সালে রাজশাহী জেলা সমিতি ঢাকা, রোটারি ক্লাব অব মতিঝিল ঢাকা, এসো বাংলাদেশ গড়ি, ২০১১ সালে বই মেলা, মনিগ্রাম মানব কল্যাণ সংগঠন, ২০১৩ সালে জাতীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্যাফার ল্যাড স্কুল আহমদপুর, ২০১৩ বাঘা উপজেলা সম্মাননা দেয়।
বর্তমানে তার মৃত্যুতে আবারও বেকায়দায় পড়েছেন এমিতখানা নিয়ে। মানুষের সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর এতিমখানা পরিচালনা করেছেন সামসুদ্দিন সরকার সমেস ডাক্তার।
এ বিষয়ে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনের সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ কমল ও তত্ত্বাবধায়ক শাহদৌলা আল মুনসুর এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মরহুম সামসুদ্দিন সরকার সমেস ডাক্তারের সহধর্মিণী মেহেরুন্নেছা বলেন, এতিমখানা চালাতে গিয়ে চাল, ডাল, সবজিসহ বিভিন্ন দোকানে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বাকি রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দোকানে বাকির পরিমাণ বেড়ে গেছে। কেউ আর বাকিতে মালামাল দিতে চাচ্ছে না। এতিমখানার কিছু জমিতে আবাদ করা ছিল। সেগুলো অতিবৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে পাওনাদাররা টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। একদিকে এতিম শিশু ও বৃদ্ধ অন্যদিকে বাকি। এ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। এতিমখানার স্মৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে, কী করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। তবে সমাজের সুহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মরহুম সামসুদ্দিন সরকার সমেস ডাক্তারের সহধর্মিণী মেহেরুন্নেছা।