স্কুলে না গিয়ে দোকানেই খাতায় সই করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৪ পিএম
জয়পুরহাটের কালাইয়ের আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলমের বিরুদ্ধে কিডনির দালালি, স্কুলে না গিয়ে দোকানে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা, বিনা ভাড়ায় উপজেলা কর্মকর্তার বাসভবনে বসবাসসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় এই শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেছেন। সেই প্রভাবেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে দিনের পর দিন স্কুলের হাজিরা খাতায় ইতোপূর্বে স্বাক্ষর করেছেন এবং এখনো করছেন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং মহল্লার সচেতন মহলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বকেয়া রেখে বছরের পর বছর উপজেলার কর্মকর্তাদের বাসভবনে এখনো বসবাস করছেন।
জানা গেছে, কালাই পৌরসভার আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম তার নিজ মহল্লার আওড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদের ছেলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলনের দূর-সম্পর্কের চাচা ভাতিজা পরিচয় দিয়ে তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। অবশ্য কাগজপত্রের ঝামেলার কারণে এখনও বেতন তুলতে পারেননি তিনি।
এছাড়াও তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের বাসা ভাড়া দিয়ে উপজেলা পরিষদের সরকারি আবাসিক ভবনে সপরিবারে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয়, বছরের পর বছর সরকারি বাসভবনে বসবাস করলেও ভাড়া দেন না। অথচ ভবনগুলোর জন্য বিদুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়। প্রতি বছরে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অথচ সরকারি সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতনের সঙ্গে বেসিক অনুযায়ী বাসা ভাড়াও দেওয়া হয়।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান সরকারি আবাসিক ভবনের ভাড়া তার কাছ থেকে মৌখিকভাবে তাগাদা দেন; কিন্তু তাতেও তিনি সারা দেননি। ফলে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউএনও স্বাক্ষরিত ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বাকি বাবদ একটি নোটিশও তাকে করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন সহকারী শিক্ষক জানান, আমাদের স্কুলের সভাপতি সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তার দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। করেছেন নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি। এমনকি থানার একজন অসুস্থ কর্মকর্তার কিডনি সংগ্রহ করে দিয়ে কিডনি দালাল বনে যান সহকারী শিক্ষক শাহারুল আলম। তার কিডনি দালালির বিষয়টি এক সময় মামলা পর্যায়ে গেলে আওয়ামী লীগ নেতার হস্তক্ষেপে তিনি পার পেয়ে যান।
আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না, রুহী, জিহাদ, রাকিবুলসহ অনেকে জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক তাদের কোনদিন ক্লাস নেননি, স্কুলেও আসে না।
আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম জানান, দোকানে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এটা মিথ্যা কথা। তার সার্টিফিকেটে সমস্যা থাকার কারণে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাননি। তবে বেতনের টাকা পাওয়ার সাথে সাথে তিনিও নিয়মিত ক্লাস করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলম মোস্তফা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক শাহারুল আলম মাঝে মধ্যে স্কুলে উপস্থিত হন। তখন তিনি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান জানান, এ বিষয়ে ইতোপূর্ব কেউ তাকে জানাননি বা অভিযোগও দেননি। তাই সেটা তার জানার বাইরে। এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান জানান, বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার কোনো নিয়ম নাই। অভিযোগ সত্য হলে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, তিনি রাজশাহীতে একটি জরুরি মিটিংয়ে আছেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।