ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞায় লাভবান ভারতের জেলেরা!
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ পিএম
ফাইল ছবি
মা ইলিশের প্রজনন বাড়াতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় ২২ দিনের (ডিম ছাড়ার সময়) নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। চরফ্যাশনের মেঘনার তেঁতুলিয়া ও সাগর মোহনার ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মৌসুমের শেষ সময়ও আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন জেলেরা।
তারা বলছেন, সমন্বয়হীন এই নিষেধাজ্ঞার ফলে লাভবান হচ্ছে ভারতের জেলেরা।
জেলেরা জানান, তারা অভাব-অনটনের মধ্য থেকেও নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরেন না। অথচ ভারতের জেলেরা তখন বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যান। তাই তারা ভারতের সঙ্গে একই সময়ে বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে বছরের বিভিন্ন সময় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সরকার। প্রতি বছর ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়া ভোলার দুটি এবং চাঁদপুর, বরিশাল ও শরীয়তপুরের একটি করে ইলিশের মোট পাঁচটি অভয়ারণ্যে এপ্রিল ও মে মাসে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। আর পটুয়াখালী অভয়ারণ্যে নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ।
পাশাপাশি প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। আর এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের জলসীমায় প্রতি বছর একবার দেওয়া হয়। তা ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন (৬১ দিন)।
জেলেদের অভিযোগ, বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে ভারতীয় জেলেরা দেদার বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ দেশের লাখ লাখ জেলে। তাছাড়া মাছের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে না করে এক জেলে যুগান্তরকে বলেন, ‘পেটে পাথর বেঁধে আমরা মাছ ধরায় বিরত থাকি। আর পাশের দেশের জেলেরা আমাদের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে না হয় জেলেদের লাভ, না বাড়ে মাছের উৎপাদন। দুই দেশে মাছ ধরা বন্ধের একই সময় থাকলে এই সমস্যা হতো না।’
জেলে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা নিষেধাজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। নৌকা-জাল সব তুলে রেখেছি। তবে সরকারের কাছে দাবি, তাদের যাতে চাল-ডাল দেওয়া হয়।
জেলে মো. জয়নাল মাঝি বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময় সংসার চালাতে একটু কষ্ট হলেও আমরা আদেশ মেনে চলি।
সামরাজ ঘাট ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় জেলেরা নৌকা ও ট্রলার নদী থেকে উঠিয়ে এনে ট্রলার থেকে ইঞ্জিন খুলে রাখছেন। আবার কেউ কেউ জাল ঠিক করে বস্তায় ভরছেন। ঘাটের আব্দুল খলিল মহাজন জানান, ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দেয় তা সামরাজ ঘাটের সব জেলেরাই মেনে চলে।