Logo
Logo
×

সারাদেশ

বগুড়ায় আরও দুই সাংবাদিকসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে জাসাস নেতার মামলা

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৯ পিএম

বগুড়ায় আরও দুই সাংবাদিকসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে জাসাস নেতার মামলা

বগুড়ায় পেশাদার আরও দুই সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৮১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও অন্যান্য ধারায় মামলা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ধুনট উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুন নবী তালুকদার ঘটনার দীর্ঘ ছয় বছর পর বৃহস্পতিবার রাতে ধুনট থানায় এ মামলা করেন।

শুক্রবার বিকালে মামলার তথ্য দিয়ে ওসি সাইদুল আলম জানান, সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ নিয়ে বগুড়া শহর ও বিভিন্ন উপজেলার ১৯ সাংবাদিক এবং এক সাংবাদিকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হলো। মামলা মাথায় নিয়ে তারা পালিয়ে থাকায় তাদের পরিবার-পরিজনরা মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব রাজনৈতিক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

রাজনৈতিক মামলায় সাংবাদিকরা আসামি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাদী জাসাস নেতা নুরুন নবী তালুকদার বলেন, দুই সাংবাদিক হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।

মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- ধুনট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এসএম মাসুদ রানা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বগুড়া-৫ আসনে সাবেক এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে আসিফ ইকবাল সনি, সাবেক দপ্তর সম্পাদক আফসার আলী, সিরাজুল ইসলাম লিটন, সৌরভ হাসান, কামরুল হাসান মাস্টার, বিপুল হাসান, মহসিন আলম, জাকারিয়া খন্দকার, হাসান খশরু, রুহুল আমিন, দুলাল তালুকদার, দৈনিক সংবাদের বগুড়া প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন মিন্টু, দৈনিক অবজারভারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম আখতারুজ্জামান প্রমুখ।

বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতার জোরে গত ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল উক্ত অবৈধ ও একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে রাজপথে জোর আন্দোলন শুরু করে। গত ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে ধুনট উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্থানীয় বাজারে মিছিল করেন। মিছিল শেষে ধুনট বাজারের পশ্চিম পাশে রাস্তায় পথসভা করতে থাকে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে লাঠি, রড, হকিস্টিক, বাটাম, ককটেল ও পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পথসভার কাছে আসে।

এ সময় ২নং আসামি আসিফ ইকবাল সনি ও অন্যদের হুকুমে ১নং আসামি এসএম মাসুদ রানা, মহসিন আলম, আফসার আলী, লিটন মাস্টার ও অন্যরা পথসভায় ককটেল নিক্ষেপ করেন। বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণ বাঁচাতে পশ্চিম দিকে পিছিয়ে গিয়ে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন আসিফ ইকবাল সনিসহ কয়েকজন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।

পথসভা ভণ্ডুল হয়ে গেলে আসামিরা ব্যানারে আগুন দিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। তাদের চিৎকার সাক্ষীরা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আসামিরা ধুনট হাসপাতালের গেটে স্লোগান দিতে থাকলে আহতরা জীবনের ভয়ে চিকিৎসা না দিয়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে থানা ও আদালতে গেলে মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।

বাদী আরও বলেন, দীর্ঘদিন দেশে আইনের শাসন না থাকায় এবং স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় থাকায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশে আইনে শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মামলা করলেন।

এদিকে হয়রানি ও মামলার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক, পুলিশ ও রাজনীতিক কার কী ভূমিকা ছিল তা সবাই জানেন। এসব মামলার ব্যাপারে বগুড়ার পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি কোনো সাংবাদিকদের হয়রানি না করার আশ্বাসও দেন। এরপরও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বাদীরা বলছেন, তারা আসামিদের কাউকে চেনেন না। দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের সহযোগিতা করার নামে গভীর রাতে বাড়িতে এসে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। কোনো কোনো বাদী বলছেন, তারা চান মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাক।

শহরের পাঁচ পেশাদার সাংবাদিক ও উপজেলা পর্যায়ে আরও ১৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার জিয়া শাহীনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

আসামি সাংবাদিকরা হলেন- বিএফইউজের সহ-সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদুল আলম নয়ন, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য অবজারভারের জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম আখতারুজ্জামান, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দৈনিক কালেরকণ্ঠের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি জেএম রউফ, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রবীণ সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু এবং দৈনিক সংবাদের বগুড়া প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন মিন্টু। এছাড়া দৈনিক যুগান্তরের বগুড়া ব্যুরো প্রধানের স্ত্রী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া খাতুন রিক্তার বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় গ্রেফতার ও হয়রানি এড়াতে ১৯ সাংবাদিক পরিবার ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে একদিকে তাদের পেশা হুমকির মুখে পড়েছে; অন্যদিকে তাদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভুক্তভোগীরা সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে এসব হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম