যশোর শিক্ষা বোর্ড
সাত কোটি টাকার চেক জালিয়াতি মামলায় ১১ জনের নামে চার্জশিট
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
যশোর শিক্ষাবোর্ডে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কর্মচারি ও ঠিকাদারসহ ১১ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে চার্জসিট দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোরের উপপরিচালক আল-আমিন।
২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজাসহ ৫ জনের নামে মামলা করে দুদক।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডের বরখাস্তকৃত হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং প্রেসের প্রোপাইটার ও যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের শেখ মজিদ আলীর ছেলে শেখ শরিফুল ইসলাম, শাহীলাল স্টোরের প্রোপাইটর ও সদর উপজেলার হাইকোর্ট মোড় জামরুলতলা এলাকার সিদ্দিক আলীর ছেলে আশরাফুল আলম, নূর এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার ও সদর উপজেলার চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার গাজী আহাদ আলীর ছেলে গাজী নূর ইসলাম, শহরের লোহাপট্টির প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের প্রোপাইটার ও সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা দুধলি গ্রামের ইকবাল হোসেনের স্ত্রী রুপালী খাতুন, উপশহর এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে সহিদুল ইসলাম, সোনেক্স ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটার ও যশোর উপশহর ই-ব্লক এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে রকিব মোস্তফা, যশোর শিক্ষাবোর্ডের সহকারী মূল্যায়ন অফিসার ও যশোর শহরের ঘোপ এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আবুল কালাম আজাদ, এই শিক্ষাবোর্ডের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও সদর উপজেলার মধুগ্রাম এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে জুলফিকার আলী, যশোর শিক্ষাবোর্ডের নিম্নমান সহকারী (চেক ডিসপাচকারী) ও সদর উপজেলার নওদাগ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে মিজানুর রহমান এবং এই শিক্ষাবোর্ডের সাধারণ কর্মচারী (চেক ডেসপাচকারী) ও সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সোহরাওয়াদীর ছেলে কবীর হোসেন।
চেক জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততা না থাকায় এজাহারনামীয় ১ নং আসামি যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সাবেক সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রায় ২৫টি হিসাব সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের যশোর বিআইএসই শাখায় পরিচালিত হয়। এর মধ্যে একটি হিসাবের সিগনেটরি বোর্ডের সচিব ও চেয়ারম্যান।
২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ওই হিসাব থেকে ৩৮টি চেক জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়ে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকার স্থলে সর্বমোট ছয় কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ টাকা তোলা হয়েছে। ৩৮টি চেকের মধ্যে টিএ/ডিএ বিল বাবদ আসামি আব্দুস সালামের নামে ইস্যু করা চেক তিনটি, সাধারণ বিল বাবদ সহকারী সচিব আশরাফুল ইসলামের নামে ইস্যু করা চেক একটি, মিম প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যু করা চেক তিনটি, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক দুটি, নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সবুজ প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যু করা চেক একটি, শরিফ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ইস্যু করা চেক একটি, সানিয়া ইলেক্ট্রনিকসের নামে ইস্যু করা চেক একটি, নুর এন্টারপ্রাইজের নামে ইস্যু করা চেক আটটি, প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যু করা চেক তিনটি, শাহী লাল স্টোর নামে ইস্যু করা চেক একটি, দেশ প্রিন্টার্স নামে ইস্যু করা চেক একটি, সেকশন অফিসার আবুল কালাম আজাদের নামে ইস্যু করা চেক একটি, অর্পানেটের নামে ইস্যু করা চেক একটি, আয়কর কর্তন বাবদ ইস্যু করা চেক চারটি ও ভ্যাট কর্তন বাবদ ইস্যু করা চেক ছয়টি।
এর মধ্যে ১৬টি চেক আসামি আব্দুস সালাম নিজে রিসিভ করেন। অবশিষ্ট ২২টি চেক আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম ডেসপাস রাইডার জুলফিকার আলী, মিজানুর রহমান ও কবির হোসেনের সহায়তায় নিজে গ্রহণ করেন।
এরপর ওইসব চেকের টাকার অংক ঘষামাজার মাধ্যমে অবমোচন করে পরিমাণ বাড়িয়ে লিখে প্রিন্ট করে উত্তোলন করেন। যার মাধ্যমে আসামিরা পারস্পরিক সহায়তায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মূল টাকার অতিরিক্ত ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার তিন টাকা আত্মসাৎ করে। এ জন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে এ চার্জসিট দাখিল করা হয়েছে।