গাজীপুর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান হোসেন শিশির প্রতিবেশী এক সন্তানের জননীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেছেন। এমন অভিযোগ দিয়ে বুধবার সকালে কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন ওই নারী।
এ ঘটনার জেরে রোববার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তাকে গাজীপুর জেলা ছাত্রদল সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
জানা যায়, অভিযোগকারী ওই নারী উপজেলার তরগাঁও এলাকার ফ্রান্স প্রবাসী এক পিতার সন্তান এবং সেই সুবাদে একই উপজেলার ফ্রান্স প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয় এবং প্রায় ৩ বছর আগে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। সে সংসারে ৭-৮ বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। আর ইমরান হোসেন শিশির উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের ইকুরিয়া এলাকার আব্দুর রশিদ মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তারা উভয়ে উপজেলা সদরের সাফাইশ্রী আদালতপাড়ায় বসবাস করছেন।
ওই নারী (৩০) অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নকালে (২০১৯ সালে) ইমরান হোসেন শিশিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর থেকে প্রায়ই শিশির তার বাড়িতে যেতেন এবং প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকলে একপর্যায়ে তিনি রাজি হন। প্রায় ছয় বছর ধরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্ট, রাজধানী ঢাকার উত্তরা এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে একসঙ্গে আবাসিক হোটেলে একই কক্ষে তারা রাতযাপন করেছেন। এমনকি তারা দুজন ভারতে গিয়ে ৯ রাত একসঙ্গে রাতযাপন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অসংখ্যবার শারীরিক সম্পর্কের ফলে অন্তত চার-পাঁচ বার ওই নারী গর্ভবতী হয়েছেন। তখন বিয়ের জন্য চাপ দিলে শিশির ছাত্রদলের পদ হারাবে জানিয়ে ছাত্র রাজনীতি শেষে তাকে বিয়ের আশ্বাস দেন এবং প্রতিবারই শিশিরের চাপে গর্ভপাত করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এতদিন পর্যন্ত ওই নারীকে বিয়ের আশ্বাস দিলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে শিশির ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং এ বিষয়ে মুখ খুললে নিজস্ব লোক দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি ও নানা রকমের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে দাবি করেন। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন বলে জানান।
পরে গত ১২ অক্টোবর শনিবার একটি ভিডিওতে (৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ডর) এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলে শিশিরের বিচার দাবি করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। পরের দিন রোববার সকালে এ বিষয়ে ওই নারী শ্রীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে তার বক্তব্য সম্বলিত ওই ভিডিও সুপার এডিট করে বানানো হয়েছে বলে দাবি করেন। শিশিরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এর সঙ্গে জড়িত বলে লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন তিনি এবং এ বিষয়ে বিচার দাবি করেন। মামলার আবেদনে সেদিন শিশিরের চাপে পড়ে ওই নারী এ সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে ইমরান হোসেন শিশির জানান, এক সন্তানের জননী ওই নারী প্রমাণ হিসেবে যেসব ভিডিও প্রচার করছেন তা অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানিয়েছেন। সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে রাজনৈতিকভাবে নাজেহাল করার জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন ওই নারীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
কাপাসিয়া থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, ইমরান হোসেন শিশিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই নারীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে। উল্লেখিত স্থানসমূহে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।