সাবেক প্রতিমন্ত্রীর কলেজে শতভাগ ফেল

সোহেল রানা, মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৭ পিএম

ময়মনসিংহ বিভাগে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৪টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল করেছে। তার মধ্যে রয়েছে সাবেক সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রীর বাবা-মায়ের নামে গড়া প্রতিষ্ঠান মুক্তাগাছার বারোর-রাবেয়া নগর আইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে মানবিক শাখায় দুইজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও কেউ পাশ করতে পারেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
জানা গেছে, বারোর-রাবেয়ানগর আইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় বাংলা বিভাগে একজন, ইংরেজিতে একজন, সমাজ বিজ্ঞানে একজন, ইসলামের ইতিহাসে একজন ও হিসাববিজ্ঞানে একজন করে সর্বমোট ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিপরীতে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী মানবিক শাখায় ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে; যার মধ্যে কেউ পাশ করতে পারিনি। বাণিজ্যিক বিভাগের শিক্ষক থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী ছিল না কলেজটিতে।
এদিকে শতভাগ ফেলের কারণ জানতে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলেও সাবেক সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রীর মামাতো ভাই হওয়ার কারণে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঘুসের বিনিময়ে একের পর এক নতুন নতুন বিভাগ খুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থী না থাকায় এবং শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে না পারাই অধিকাংশ শিক্ষক ওই কলেজের চাকরি ছেড়ে দেন। ফলে কলেজটিতে নামমাত্র জেনারেল শাখা চালু থাকলেও কোনো শিক্ষা কার্যক্রম ছিল না। ফলে কলেজটিতে শতভাগ ফেলের মতো ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের দাবি, মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে কলেজের প্রধান শিক্ষক অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন; যার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। পাঠদান প্রক্রিয়া ভালো নাই দেখে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে এই কলেজে ভর্তি করেন না।
এ প্রসঙ্গে বারোর-রাবেয়া নগর আইটি কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, কলেজে শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানের লক্ষ্য ছিল অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। শিক্ষক আছে শিক্ষার্থী নাই। দুইজন কোনো মতে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
শতভাগ ফেলের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে বারোর-রাবেয়া নগর আইটি কলেজ প্রধান নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে কলে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, জেনারেল বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকরা হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এ বছর থেকে আর জেনারেল বিভাগে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়নি।
ঘুসের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি ফোন কলটি কেটে দেন।