শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখতে চায় তুহিনের বাবা-মা
ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫২ এএম
নিহত তুহিন
সংযুক্ত আরব আমিরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্তিশ গ্রামের তুহিন মিয়ার (২৬) বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি ও মাতম যেন থামছেই না। ওই তরুণের পরিবারের সদস্য ও আশপাশের প্রতিবেশীরা শোকে মুহ্যমান।
গত রোববার আরব আমিরাতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় দুবাই শহরের আল কুজ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ওই তরুণ।
তুহিন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছত্তিশ গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়া ও রিনা বেগম দম্পতির বড় সন্তান তিনি। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তুহিন বড়।
পরিবার সূত্র জানায়, সংসারে সচ্ছলতা আনতে তিন বছর আগে তুহিন আরব আমিরাতে যান। সেখানে কাজ করে যা পেতেন তা দিয়ে চলত সংসারের যাবতীয় খরচ। রোববার আরব আমিরাতের স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে পাঁচটায় দুবাইয়ের আল কুজ এলাকায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক তুহিনকে ধাক্কা মারে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান তুহিন।
সোমবার সকালে তুহিনের বাড়িতে দেখা যায়, উঠানে তাঁর মা, দুই ভাই-বোন ও পাশের লোকজন আহাজারি করছেন। স্বজন হারানোর শোকে মুহ্যমান সবাই। স্বজনদের কান্না ও শোকে ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ।
তুহিনের মা রিনা বেগম বলেন, ‘তুহিনই আমার সব। আমরার খাওয়া, ঔষধ খরচ আমার ছেলে দিত। কিন্তু শেষমেশ আমার কলিজার টুকরা ছেলেটা দুনিয়া থেকে চলে গেল। এখন আমি কি নিয়া বাঁচবো। আমার সংসারের খরচ কে দিব। ঋণ-কর্জের টাকা কেমনে শোধ করব। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। শেষবারের মতো আমার ছেলের মুখ দেখতে চাই। সরকার যদি ওর লাশটা একটু আমার কাছে এনে দিত। আমার বুকের মানিক আমার ছেলে তুহিনকে আমি শেষবারের মতো দেখতে চাই।’
তুহিনের বাবা আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেটা খুব ভালো ছিল। ছোট বয়সে সে সংসারের হাল ধরেছে। আমার ছেলের দুটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। শিশু বয়সে আমার নাতনিরা এতিম হয়ে গেল। শেষ বারের মতো আমার সন্তানকে আমি ছুঁয়ে দেখতে চাই।’
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা আরব আমিরাত প্রবাসী বদরুল আলম, শফিকুল ইসলাম জগলু ও আমির আলী জানান, তুহিনের লাশ উদ্ধার করে দুবাই পুলিশ মর্গে রেখেছে। মরদেহ দেশে পাঠাতে বিভিন্ন আইনি কাজ আছে। আমরা তুহিনের মরদেহ দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছি। তাছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার একটি মামলা হচ্ছে। তুহিনের ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করলে দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা দেশে পাঠাতে সার্বিক চেষ্টা করছি।