সেতু আছে, হাতল নেই! ভোগান্তি এলাকাবাসীর
কাজী সোহেল, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০১ পিএম
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের বারুয়াখালী থেকে ভাঙ্গাপাড়া যাওয়ার এক কিলোমিটার পথে ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের একটি ‘ভাঙা সেতু’ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। সেতুতে নেই রেলিং। বেরিয়ে এসেছে রড। ফাটল ধরেছে পিলার ও মূল সেতুতে।
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সেতুটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের বা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ছয় মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ সেতু থেকে পড়ে আহত হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, তৎকালে মূলত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও আসন্ন নির্বাচনে ভোট টানার কৌশল হিসেবে ২০০২ সালের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়; কিন্তু নির্মাণের মাত্র ৬ বছরের মাথায় সেতুর দুপাশের রেলিং ধীরে ধীরে খসে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের সময় নিম্নমানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার ফলে কিছু দিনের মধ্যেই রেলিং ভেঙে যায়; কিন্তু এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও এর সংস্কার করা হয়নি। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা শত আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর তা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হলেও জনপ্রতিনিধিরা নির্বাক।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বারুয়াখালী ইউনিয়নের ছত্রপুর, করপাড়া, ভাঙ্গাপাড়া, জৈনতপুর, দীর্ঘগ্রাম ও জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ঘোষাইলসহ ১০টি গ্রামের লোকজন এ সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করেন। সেই হিসেবে চার-পাঁচ হাজার লোক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চলাচল করেন।
এছাড়া সেতুটি পার হয়েই দোহার-হরিরামপুর উপজেলার একাংশের মানুষ বারুয়াখালী বাজার, কলাকোপা, বান্দুরা বাজার, নবাবগঞ্জ সদর ও ঢাকায় যাতায়াত করেন। এছাড়া খুব বেশি জনসমাগম না হলেও দিনে দশ-বারো হাজার লোক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চলাচল করেন। বিকল্প পথ অনেক দূরে হওয়ার নিরুপায় হয়ে ইজিবাইক, ভ্যান ও রিকশা বিভিন্ন যানবাহনকে এই সেতুটি দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অসুস্থ মানুষজনকে। কারণ ভাঙ্গাপাড়া সেতুর পাশাপাশি এর রাস্তার অবস্থাও খুব খারাপ। সেতুর দুপাশের রেলিং না থাকার ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কিছু দিন আগে মারুফ নামের চার বছরের এক শিশু সেতু থেকে পড়ে আহত হয়। এছাড়াও রানা (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র সেতু থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। কিছু দিন আগে একটি মোটরসাইকেলসহ এক যুবক পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। প্রতিনিয়তই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, যখন সেতুটি নির্মাণ করা হয় এর কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছিলেন; কিন্তু তখনকার প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছুই করা যায়নি।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এত টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করা হলো আর ব্যবহার করা হলো দুই নম্বর জিনিস। আসলে যেকোনো সরকারি কাজ করার সময় নেতারা নিজেদের পকেট ভারি করায় ব্যস্ত থাকেন। অতি দ্রুত সেতুটি সংস্কার না করলে যদি সম্পূর্ণ সেতুটি ভেঙে যায় তাহলে স্থানীয়রা অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যাবেন।
বারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটি উপজেলা এলজিইডি অফিস দেখে। তাদের বলে দেব সেতুটির বিষয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের নবাবগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, ব্রিজের পাশের রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। এ ব্রিজটি ভেঙে নতুন বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।