বরগুনায় মৎস্য বিভাগের অভিযানে হামলা, আহত ৫
বরগুনা (দক্ষিণ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
বরগুনায় মা ইলিশ রক্ষায় শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনার পর মৎস্য বিভাগের লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাছ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার মধ্যরাত থেকে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২২ দিনের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ শিকার, পরিবহণ, বিক্রি ও মজুতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ১২ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকেই বরগুনার মাছ বাজারে দাম কমিয়ে ৫০০ টাকা কেজিতে মাইকিং করে বিক্রি শুরু করে মাছ ব্যবসায়ীরা।
আইন অনুযায়ী রাত ১২টার পর ইলিশ বিক্রির নিয়ম না থাকলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বরগুনা পৌরসভার মাছ বাজারের কিছু ব্যবসায়ী রাত ৩টা পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি করেন। পরে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের অভিযানে এক আড়তদারের কাছে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। এ সময় তাকে ৫০০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয় এবং জব্দ করে নিয়ে যাবার সময় মৎস্য বিভাগের লোকজনের ওপর মাছ বাজারের কিছু লোক তাদের ওপর হামলা করে। এতে মৎস্য অধিদপ্তরের দুই কর্মচারীসহ ছাত্রদের দুজন প্রতিনিধি আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতদের মধ্যে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রহরী মো. মাসুম হাওলাদর বলেন, বাজারে যারা মাছ বিক্রি করেন তাদের দুই থেকে তিনবার আমরা বলেছি দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ বিক্রি শেষ করতে। এ সময় তাদের রাত ১টা পর্যন্ত সময় দিলে রাত ২টার দিকে গিয়ে দেখি তারা মাছ বিক্রি করছেন। পরে মৎস্য কর্মকর্তাসহ পুলিশ নৌবাহিনীর লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের জরিমানা করেন। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাছ ফেলে দেওয়াসহ আমাদের সহযোগিতাকারী ছাত্রদের দুজন প্রতিনিধিকে মারধর করেন। পরে সেখান থেকে চলে আসার সময় প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মিলে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
মৎস্য বিভাগে কর্মরত মো. পলাশ খান নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, মাছ বিক্রির সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজারে থাকা মাছগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে মাছগুলো এতিমখানা বা অসহায়দের দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা, মিডিয়া সেল) তালুকদার মো. ইনতেজার যুগান্তরকে বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ বাস্তবায়নে শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাত ২টায় বরগুনা পৌরসভার মাছ বাজারে নিষিদ্ধকালীন ইলিশ বিক্রির অভিযোগে মিলন নামের এক আড়তদারকে বাংলাদেশ মৎস্য সুরক্ষা আইন অনুসারে ৫০০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান ও ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। আমরা চলে যাওয়ার পরে মৎস্য বিভাগের কর্মচারীদের সঙ্গে মাছ বাজারে শ্রমিকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে মাছ ব্যবসায়ী ও উপস্থিত অন্যদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ইলিশ রক্ষার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বরগুনা থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, রাতে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের অভিযান পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এতে মৎস্য বিভাগের দুজন এবং ছাত্রদের মধ্যে দুজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় আমরা কারো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।