Logo
Logo
×

সারাদেশ

মনপুরায় সরকারি বরাদ্দের চাল পাচ্ছে না সাড়ে তিন হাজার জেলে

Icon

মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৭ এএম

মনপুরায় সরকারি বরাদ্দের চাল পাচ্ছে না সাড়ে তিন হাজার জেলে

ভোলার মনপুরার মেঘনার ৯০ কিলোমিটার এলাকায় ২২ দিন সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিলেও ভোলার মনপুরা উপকূলের আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার নিবন্ধিত জেলের ভাগ্যে নেই সরকারি বরাদ্দের চাল। তবে জেলেদের দাবি সরকারি নিবন্ধিত ছাড়া অনিবন্ধিত জেলে ৫-৭ হাজার রয়েছে। তারাও প্রতি বছর কোন চাল পাচ্ছে না। 

একদিকে পাচ্ছে না চাল, অন্যদিকে এনজিওর ঋণ ও মহাজনের দাদনের টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে হাজার হাজার জেলে। এছাড়াও এই ২২ দিন কিভাবে সংসার চালাবে তা নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন বিচ্ছিন্ন উপকূলের জেলেরা।

মনপুরা উপজেলার সদর হাজিরহাট ইউনিয়নের জেলে বাচ্চু ও আবদুর রব মাঝি যুগান্তরকে জানান, এই বছর ভরা মৌসুমে মেঘনায় তেমন ইলিশের দেখা মেলেনি। অল্প কয়দিন কিছু মাছ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ২২ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখন কিভাবে ঋণের কিস্তি চালাবো আর কিভাবে সংসার চালাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

জানা যায়, রোববার (১২ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মেঘনার ৯০ কিলোমিটার ও তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। প্রতি বছর মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। 

উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের জেলে মিজান, বশির, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের জেলে ফারুক, সফিজল, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের জেলে কবির, সুমন, রাসেদ, কলাতলী ইউনিয়নের জেলে রাসেদ, হাসান সহ অনেকে জানান, প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞার আগে মৎস্য কর্মকর্তারা ঘাটে ঘাটে জেলেদের নিয়ে সভা করে। প্রত্যেকবার বলে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রত্যেক জেলেকে চাল দিবো। কিন্তু প্রতি বছর ৫-৭ হাজার জেলে চাল পায় না। যারা চাল পায় না তারা ঋণ করে সংসার চালায়। একের পর ঋণ নিয়া জেলেরা বড় বিপদের মধ্যে রইছে। আমরা সরকারের কাছে আমাদের ন্যায্য চাল দাবী করছি।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জন। কিন্তু সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১১ হাজার ৫০ জেলের। সরকারি হিসাবে চাল পাচ্ছেনা নিবন্ধিত ৩ হাজার ২ শত ৯৭ জেলে। 

এর মধ্যে উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে এক হাজার সাতশত ত্রিশ জেলের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক হাজার তিনশত বত্রিশ জেলের চাল। ওই ইউনিয়নে চাল পাচ্ছেনা তিনশত আটানব্বই জেলে। ২ নং হাজিরহাট ইউনিয়নে নিবন্ধিত চার হাজার সাতশত বাইশ জেলের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ছয়শত পঁয়ত্রিশ জেলের। চাল পাচ্ছেনা এক হাজার সাতাশি জেলে। ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে তিন হাজার ৬৬ জন জেলের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই হাজার তিনশত ষাট জেলের। 

ওই ইউনিয়নে চাল পাচ্ছেনা সাতশত ছয় জেলে। ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে চার হাজার চব্বিশ জেলের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন হাজার আটানব্বই জেলের চাল। ওই ইউনিয়নে চাল পাচ্ছে না নয়শত ছাব্বিশ জেলে। কলাতলী ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে আটশত পাঁচজনের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ছয়শত পঁচিশ জেলের চাল। ওই ইউনিয়নে চাল পাচ্ছে না একশত আশি জেলে।

এই ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লিটন সরকার যুগান্তরকে জানান, মনপুরা উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জেলের বিপরীতে ১১ হাজার ৫০ জেলের চাল ২৭৬.২৫০ মেট্রিকটন বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই চাল ৫টি ইউনিয়নে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

নিবন্ধিত ৩ হাজার ২ শত ৯৭ জেলে চাল পাচ্ছেনা, তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সরকার যা বরাদ্দ দিয়েছে, তা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি জেলেদের চাল বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার দেব জানান, অভিযানকালে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ইতিমধ্যে ভোলা জেলায় এক হাজার বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে আরও ৮শত বকনা বাছুর বিতরণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২২ দিন এনজিও ও ব্যাংকের কাছে জেলেদের ঋণের কিস্তি স্থগতি রাখার জন্য একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম