সন্তান বিক্রি করা সেই গুলিবিদ্ধ রশিদকে আর্থিক সহায়তা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০২ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দিনাজপুরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দিনমজুর আব্দুর রশিদ (৩০)। তাকে দিনাজপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হলে সেখানে তার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ দিনের নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছিলেন স্ত্রী রত্না বেগম। বিষয়টি জানাজানি হলে পরে সন্তানকে ফেরত আনা হয়। সেই রশিদের পরিবারকে এবার ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন ‘লাভ শেয়ার বিডি ইউএস’।
সোমবার (৭ অক্টোবর) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সমন্বয়ক মো. ফেরদৌস আলম লিটনের সভাপতিত্বে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের হলরুমে দিনমজুর রশিদের হাতে এ আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখার সমন্বয়ক হযরত আলী, সহ-সমন্বয়ক ওবায়দুল হক, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু সালেহ ইব্রাহিম ইমরান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সবুজ আল পায়েল, জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সদস্য তহিদুল হক, মাসুদ রানা, মো. কবির হোসেন, সাংবাদিক মোবারক হোসেন, আহসান হাবীব প্রমুখ।
সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব, জাতিসংঘ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে নিয়মিত ব্রিফিংকারী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। তার সঙ্গে থাকা চ্যারিটি সংগঠন ‘লাভ শেয়ার বিডি ইউএস’-এর পরিচালক যথাক্রমে ফজলে ভূঁইয়া নওশাদ, জাহিদ খান, জাকির চৌধুরী, আরিফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ওই সময় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহত ৬৫ জন রোগীকে আর্থিক সহায়তা দিতে। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও ওই আন্দোলনে নিহত ৫ সাংবাদিক পরিবারকে আলাদাভাবে ৫ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করেন তারা। তখন গুলিবিদ্ধ তেঁতুলিয়ার আব্দুর রশিদ এবং তার চিকিৎসা খরচ মেটাতে নিজের সন্তান বিক্রির বিষয়টি তাদেরকে অবগত করান নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের অনলাইন বিভাগের ডেপুটি ইনচার্জ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতাউর রহমান কাবুল। তখন গুলিবিদ্ধ রশিদের পরিবারকেও নগদ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। সাংবাদিক আতাউর রহমান কাবুল সেই অর্থ তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পাঠানো হয়।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি বলেন, লাভ শেয়ার বিডি ইউএসকে অশেষ ধন্যবাদ যে তারা এভাবে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে এই এলাকার অসহায় মানুষের সেবায় এই সংগঠন আরও ভূমিকা রাখবে। একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সমাজের সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি জানান, অপারেশনের পর গুলিবিদ্ধ রশিদ এখনও আশংকামুক্ত নন। শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন।
৫০ হাজার টাকা পেয়ে গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ বলেন, আমার চিকিৎসার জন্য নবজাতক কন্যাকে বিক্রি করেছিলেন আমার স্ত্রী। ভোটার পরিচয়পত্র না থাকায় কোনো সহযোগিতা পাচ্ছিলাম না তখন। পরে ইউএনও স্যার আমার পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করেন এবং আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হতে পেরে এখন আমি অনেক আনন্দিত। তবে আমার শরীরে এখনও চারটা গুলি রয়েছে। এই দুঃসময়ে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি। যারা আমাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।