মাদারীপুরে ১৫ স্পটে ছিনতাই বেড়েছে, নেই পুলিশের টহল
টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৪ পিএম
পুলিশের টহল না থাকায় মাদারীপুরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে সব লুটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। শহরের অন্তত ১৫টি স্পটে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নিয়মিত ছিনতাই হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে ক্ষুব্ধ আইন বিশেষজ্ঞরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের টহল বাড়ানো হলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আব্দুল মোতালেব মিয়া। মাদারীপুর শহরের লেকেরপাড়ে শাকসবজি বিক্রি করেন। গত ৭ অক্টোবর ভোরে পাইকারি মালামাল আনতে রিকশাযোগে পুরানবাজার রওনা দেন। এমএম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরির সামনে আসলে তার রিকশার গতিরোধ করে মুখোশপরা ৩-৪ জন দুর্বৃত্ত। অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনিয়ে তার কাছ থেকে ৩১ হাজার ৫৮০ টাকা নিয়ে যায়। বাধা দিলে তাকে আহত করে ছিনতাইকারীরা। একইভাবে একইস্থানে ছিনতাইয়ের শিকার হন একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বাচ্চু মোল্লা। গত ৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে পৌরসভার সামনের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে তার মোটরসাইকেল থামিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ও গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায় চক্রটি।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে আসা যাত্রী ও সকালে হাঁটতে বের হওয়া মানুষ ছিনতাইকারীদের মূল টার্গেট। মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ, বাদামতলা, ইউআই স্কুল রোড, তরমুগিরয়া, পুরান বাজার, রকেটবিড়ি, চৌরাস্তাসহ অন্তত ১৫টি স্থানে নিয়মিত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এমন ঘটনায় সব খুইয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ আইন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর ভোররাতে ঢাকা থেকে আসা এক যাত্রীর কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে ধাওয়া দিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ লঞ্চঘাট থেকে হত্যা মামলার আসামি শান্তিনগর এলাকার নিজাম খাঁর ছেলে টুনটুনকে আটক করে পুলিশ দেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী আব্দুল মোতালেব মিয়া বলেন, চলতি রিকশা থামিয়ে আমার কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে চক্রটি। বাধা দিলে তারা আমাকে আহত করে। এ ঘটনা থামানো প্রয়োজন।
আরেকজন ভুক্তভোগী বাচ্চু মোল্লা বলেন, আমি মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলাম। হঠাৎ মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার মোটরসাইকেল থামানোর চেষ্টা করে। পরে আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। এ সময় গলায় রামদা ধরে আমার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এই ঘটনায় ছিনতাইকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এমন অপরাধ বাড়তেই থাকবে।
দোকানি আবুল হোসেন মৃধা বলেন, আমি পুরাতন কোর্ট এলাকায় পুলিশ সুপার মার্কেটে দোকান করি। সারাদিন দোকান শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে আতঙ্কে থাকি। সম্প্রতি আমার দোকানের তালা ভেঙে চুরি হয়েছে। চুরি-ছিনতাই যেভাবে বাড়ছে পুলিশের নিরাপত্তা না হলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই।
হাজীরহাওলা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বেপারী বলেন, রাত হলে রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারীদের উৎপাত বাড়ে। যাত্রী ও পথচারীদের সবকিছু ছিনিয়ে নেয় এই ছিনতাইকারীরা। সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করলেই এই অপরাধ কমে যেত।
মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে পারে তাহলে অবশ্যই সমাজ থেকে চুরি, ছিনতাই কমে যাবে। এতে সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশকে আগের মতো মাঠে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মাদারীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন এলিন বলেন, সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় তাদের মনবল ভেঙে গেছে। যে কারণে তারা মাঠে নেই। এজন্য চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঠিক না হলে এ ধরনের অপরাধ কমবে না। এজন্য পুলিশকে সক্রিয় হতে হবে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ভাস্কর সাহা বলেন, মাদারীপুরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি টহল বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে তদন্তকেন্দ্র ও পুলিশ ফাঁড়িতে সদস্যরা যোগদান করেছেন। আশা করছি, এই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা শিগগিরই কমে আসবে।