শেরপুরে পানি সরে যাওয়ায় ভেসে উঠছে ধ্বংসযজ্ঞ
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
বৃষ্টি না হওয়ায় শেরপুরের ৫ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে যাওয়া পানিতে নিম্নাঞ্চলে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকেও পানি ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে।
অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শুক্রবার জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয় এবং পরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের আংশিক ও নকলা পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়।
বর্তমানে শেরপুর ও নকলার নিচু এলাকা থেকেও পানি ধীরে ধীরে নামছে। স্থানীয় নদ নদীর পানিও অনেক কমে গেছে। ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি নদী মহারশি, সোমেশ্বরী, নালিতাবাড়ির ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার তাণ্ডবের ক্ষত চিহ্ন ক্রমে ভেসে উঠছে।
এবারের বন্যায় সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়িতেই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক নিচু এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। বন্যার পানি নিচে এখনও বিস্তীর্ণ এলাকার খেতের রোপা আমন ধান তলিয়ে রয়েছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ স্থানে রোপা আমন ধান একেবারে নষ্ট হওয়ায় এক মুঠো ধানও পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারগুলো মুষরে পড়েছেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং কাদায় পানিতে একাকার হয়ে থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পুকুর ও মাছের খামারগুলো থেকে সব মাছ ভেসে যাওয়ায় জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। এ ক্ষতি তারা কিভাবে পূরণ করবেন তা ভেবে কোন কুল-কিনারা পাচ্ছেন না।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় জানান, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং নাকঁগাও পয়েন্টে ৪২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেও তা বিপদসীমার ৫১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হলেও সেখানের পানিও কমতে শুরু করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চলমান রয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বলা হয়েছে।
বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার পর পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে বন্যায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে টেউটিন ও নগদ টাকা বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে।