নেত্রকোনায় বন্যার পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
নেত্রকোনায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে। তবে পানি কমলেও মানুষের সংকট কাটেনি। যারা আশ্রয়কেন্দ্র বা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছেন, তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ঘরের ধান-চাল পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবারের জন্যও নিম্নআয়ের এসব মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
জেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে থাকায় কাজের সন্ধানে সহজে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। পানির নিচে আছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসল। এখনো ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। পানিবন্দি আছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এসব মিলিয়ে বন্যার্তরা বিপদের মধ্যে সময় পার করছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, গতকাল বুধবার দুপুর থেকে কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালীসহ সব নদ-নদীর পানিই দ্রুত কমছে। তবে এখনো উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। অন্য নদ–নদীগুলোয় পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে আছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব নদ-নদীর পানি ধনু হয়ে মেঘনায় দ্রুত নেমে যাবে।
অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৬ অক্টোবর নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা,বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা হয়। বন্যায় ১৩১টি গ্রামে পানিবন্দি হন লক্ষাধিক মানুষ। প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়। গতকাল বুধবার বিকাল থেকে পানি কমতে শুরু হলেও এখনো বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়িতে পানি আছে। পানির কারণে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ আছে। প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক পানির নিচে থাকায় সব ইউনিয়নের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ সচল হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক। বাকিগুলো সিসি, আরসিসি, মেগাটম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। পানিতে তলিয়ে যাওয়া যেসব সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে, অধিকাংশ সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্রোতে স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় পাকা সেতু, বক্স কালভার্টসহ সংযোগ সড়ক বন্যায় ধসে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
কলমাকান্দার লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলেও মানুষের ভোগান্তি কমছে না। অনেক মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, টাকার অভাবে তা সংস্কার করতে পারছেন না। ত্রাণের জন্য প্রচুর মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। ঘরবাড়ির পাশাপাশি রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখনো গাঁওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া ও কাকৈইগড়া ইউনিয়নের অনেক গ্রামেই পানি আছে। বিশেষ করে শ্রীপুর, বিল কাকড়াকান্দা, দৌলতপুর, গোজালিয়া, রামবাড়ি, শান্তিপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে পানিতে আমন খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, আকস্মিক বন্যায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৭৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বন্যায় ১ হাজার ৪৮০টি পুকুর ও খামারের ৭২৩ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোনায় এ পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৮০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া সমন্বয় করে বিভিন্ন এনজিও, সংগঠনসহ ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।