গাজীপুরে শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়িতে তীব্র গ্যাস সংকট
যুগান্তর প্রতিবেদন, গাজীপুর
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
সরবরাহ কমে যাওয়ায় গাজীপুরে শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়িতে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও জ্বলছে না রান্নার চুলা, আবার কোথাও কোথাও আগুন থাকলেও তা কোনোরকমে মিটমিট করছে। যার কারণে রান্না খাবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন গাজীপুর মহানগর ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদনও কমেছে।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর ভোগড়া, বাসন সড়ক, কড্ডা, কোনাবাড়িসহ অন্তত ১০টি এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দেয় বলে জানা গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, সকাল ১০টার পরপরই গ্যাস সরবরাহ প্রায় নাই হয়ে যায়। কোথাও একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক জায়গায় গ্যাস থাকলেও চুলা জ্বলছে মিটমিট করে।
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে গ্যাসের চুলায় ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছি না। যে পরিমাণে জ্বলে তাতে রান্নার কাজ হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সিলিন্ডার গ্যাস কিনে নিয়েছি। সেটি দিয়েই এখন বাসার রান্নার কাজ করছি।
গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, কাশিমপুর ও এর আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ কারখানায় গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্ভোগে পড়েছে বাসা বাড়ির গ্রাহকরা। গাজীপুর শহরের পাশেই মারিয়ালী এলাকা।
ওই এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, বেশি ভাড়া দিয়ে গ্যাস সংযোগ থাকা একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু বাসায় সারাদিনে গ্যাসই পাওয়া যায় না। রাতে এবং সপ্তাহের ছুটির দিনে কিছু গ্যাস পাওয়া যায়।
গ্যাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক সুরুজ আলম বলেন, গাজীপুরে প্রতিদিন যে পরিমাণে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণ সরবরাহ নেই। সরবরাহ কম থাকায় বাসাবাড়ি এবং শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।
গাজীপুরে একাধিক কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় অর্ধেকে নেমে এসেছে পণ্য উৎপাদন। এছাড়া আবাসিক গ্রাহকরা সময়মতো গ্যাস না পাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।
শিল্পমালিকদের অভিযোগ, গ্যাস সংকট থাকায় প্রতি ঘটফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও অনেক কারখানায় সেটি নেমে আসে মাত্র দুই তিনে। আবার কোনো কোনো কারখানায় নেমে এসেছে শূন্যতে। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় চাহিদামতো উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোনাবাড়ি এলাকার একটি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান জানান, তাদের কারখানায় অনেক দিন ধরেই গ্যাস সংকটে রয়েছে। কয়েকবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। যেখানে গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই সেখানে দুই-তিন বা একেবারেই শূন্য হয়ে আছে। এতে কারখানা উৎপাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে।
গাজীপুরের সদর, কোনাবাড়ি ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এগুলোর অন্যতম উপাদান হচ্ছে প্রাকৃতিক জ্বালানি। অর্থাৎ গ্যাসের ওপর ভিত্তি করেই এসব এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে তীব্র গ্যাসের সংকট।
গাজীপুর তিতাসের ব্যবস্থাপক (ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিভিওশন) মো. রেদোয়ান বলেন, জেলায় বর্তমানে যে চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। এতে শিল্প-কারখানা ও বাসিবাড়িতে গ্যাসের সরবরাহ বা চাপ দুটিই কমে গেছে। আগামী ১৫ তারিখের পর নতুন এলএসজি দেশে পৌঁছবে। তখন হয়তো সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।
এদিকে গত তিন মাস ধরে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা জোনাল অফিসের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না। গ্যাস না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার কালিয়াকৈর, লতিফপুর, পিরেরটেকি, জানেরচালা, টানকালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেরা। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বাজার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার, চুলা, কাঠ কিনে ও অন্যান্য জালানি ব্যবহার করে তাদের রান্না-বান্নার কাজ করছেন। তাদের অভিযোগ, গ্যাস না পেলেও নিয়মিত গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চন্দ্রা জোনাল অফিসে বারবার অভিযোগ দিয়েও গ্যাসের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। যার কারণে সোমবার দুপুরে ওই সব এলাকার মানুষ চন্দ্রা জোনাল গ্যাস অফিস ঘেরাও করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নবীনগর-চন্দ্রা জোনাল মার্কেটিং অফিসের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, এটা একটা জাতীয় সমস্যা। আমাদের সিস্টেমে গ্যাস কমে গেছে। যতদিন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে গ্যাসের সমস্যা সমাধান না হবে, ততদিন পর্যন্ত এ সমস্যা আমাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়।