বান্দরবান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নেই
আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৬ পিএম
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কোনো প্রভাব পড়েনি বান্দরবান জেলায়। সম্প্রীতির এ জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে সরকারের লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই।
সীমিত পরিসরে বান্দরবান সদরসহ আশপাশের দর্শণীয় পর্যটন ম্পটগুলোও খোলা রয়েছে আগের মতো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার গুঞ্জন শুনে আমরা পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছি। বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে একটা স্মারকলিপিও দিয়েছি।
জসিম উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন- কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু ভ্রমণকারী পর্যটকদের ভ্রমণে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। পর্যটকরা মঙ্গলবারও নীলগিরি সড়কে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে।
এদিকে পাহাড়ে অস্থিরতাসহ নানা কারণে দফায় দফায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বান্দরবানে ধস নেমেছে পর্যটন শিল্পে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির বিরূপ প্রভাব পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্যে। এতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বান্দরবান জেলায় পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে ব্যাংক ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলা একটা সময়ে সারা বছরই পর্যটকে মুখর থাকত। ২০২০ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত কোভিড ১৯ ক্ষতির পরই ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে পাহাড়ে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সংঘাত অস্থিরতায় নিরাপত্তা বিবোচনায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সেই চিরচেনা পর্যটকে ভরপুর দৃশ্যটা যেন বদলে যায়।
এরপর ২০২৩ সালে বন্যা ও ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দীর্ঘমেয়াদি লোকসানে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের ইকোসেন্স ও হলিডে ইন রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ও বান্দরবান জেলা রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা চলছে ২০২২ সাল থেকেই। মধ্যেখানে থানচি খুলে দেওয়া হলেও রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে আজও।
একের পর এক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় অনেকটায় পর্যটক শূন্য বলা চলে পুরোটা বান্দরবান। ব্যাংক ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখাটাই হলো বর্তমানে ব্যবসায়ীদের বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে বেশকটি আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে দূর্গম অঞ্চলগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকলেও বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, প্রান্তিকলেক, শৈলপ্রপাত, রুপালী ঝর্না, বৌদ্ধ ট্যাম্পল, রামজাদী দর্শণীয় স্থানগুলো ভ্রমণ উন্মুক্ত ছিলো পর্যটকদের জন্য। এতে স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা খেয়ে না খেয়ে টানাপোড়েনের মাধ্যমে কোনোরকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখেছিল। হঠাৎ করেই মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এটি নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসব ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা উৎসব কেন্দ্র করে বান্দরবানে আবাসিক হোটেল ও পরিবহনে অগ্রিম বুকিং দেওয়া পর্যটকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে বুকিং বাতিল করায় হোটেল রেস্টুরেন্ট ও পরিবহণ মালিক শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। জেলায় রয়েছে দুই শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউজ, শতাধিক রেস্টুরেন্ট এবং চার শতাধিকের বেশি ট্যুরিস্ট গাড়ি। এগুলোর সঙ্গে দশ হাজারের বেশি শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। পর্যটন শিল্প রক্ষায় সীমিত পরিসরে পর্যটন ভ্রমণ খুলে দেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বান্দরবান পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক ও ট্যুরিস্ট পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি নাছিরুল আলম বলেন, পর্যটন শিল্প হচ্ছে পার্বত্য জনপদের মূল অর্থনৈতিক চাকা। কয়েক বছর ধরে দেশের অস্থিতিশীল নানা পরিস্থিতির কারণে পর্যটন শিল্প বর্তমানে ধংসের দারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হলো পর্যটনের ভরা মৌসুম; কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই ভ্রমণ থেকে পর্যটকদের বিরত থাকার মৌখিক অনুরোধ করাটা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা আমাদের জানিয়েছেন- পর্যটকদের ভ্রমণে লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বান্দরবান জেলায়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, অনিবার্য কারণবশত আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত তিন পার্বত্য জেলায় একসঙ্গে দেওয়া হয়েছে।